• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

লোকসভায় পেশ মহিলা সংরক্ষণ বিল 

দিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর – নতুন সংসদ ভবনের লোকসভায় পেশ হল মহিলা সংরক্ষণ বিল। মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই বিল পেশ করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর নতুন সংসদ ভবনে এই বিল পেশ হয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে মহিলা ভোটারদের মন জয় করতেই এই বিল পাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।  লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায়

দিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর – নতুন সংসদ ভবনের লোকসভায় পেশ হল মহিলা সংরক্ষণ বিল। মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই বিল পেশ করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর নতুন সংসদ ভবনে এই বিল পেশ হয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে মহিলা ভোটারদের মন জয় করতেই এই বিল পাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।  লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের উল্লেখ রয়েছে এই বিলে। এই বিলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’।

সোমবার থেকে সংসদে শুরু হয়েছে বিশেষ অধিবেশন। এই অধিবেশন পুরনো সংসদ ভবনে হলেও মঙ্গলবার থেকে নতুন ভবনে অধিবেশন বসে। প্রথম দিনই মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করে মোদি সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে এই বিল অনুমোদন পায়। মঙ্গলবার নতুন সংসদ ভবনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক দিন। নতুন সংসদ ভবনে প্রথম কার্যধারা হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নারী শক্তির জন্য পথ খুলে দেওয়ার সূচনা হল।  নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের আমাদের সংকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধনী বিল আনছে। লোকসভা এবং রাজ্যসভায় মহিলাদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই বিল তৈরি করা হয়েছে। ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ আমাদের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনকালে মহিলা সংরক্ষণ বিল বেশ কয়েকবার উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু বিলটি পাশ করার জন্য যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। ফলে সেই স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আজ, ঈশ্বর আমায় এটিকে এগিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছেন… আমাদের সরকার আজ উভয় কক্ষে মহিলাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে এই নতুন বিল আনছে।’ মোদি আরও বলেন, ‘আমি সমস্ত মহিলাদের আশ্বস্ত করতে চাইছি যে আমরা এই বিলটি একটি আইন রূপে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি উভয় কক্ষের সকল সদস্যকে সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস করানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

এদিকে নারী সংরক্ষণ বিল পেশের আগেই তরজা শুরু হয়ে যায় লোকসভায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এর আগে চেষ্টা হলেও সংসদে এই বিল পাশ করানো যায়নি। তাই নতুন করে এই বিল আনা হবে লোকসভায়। সোমবার রাত থেকেই কংগ্রেস সহ একাধিক দল এই বিল নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করতে থাকে। মঙ্গলবার সকালে স্বয়ং সোনিয়া গান্ধি এই বিষয়ে নিজের দলের কৃতিত্ব দাবি করেন। সংসদে ঢোকার মুখে মহিলা বিল সম্পর্কে বলেন, ‘ইয়ে আপনা হ্যায়।’ অর্থাৎ এটা আমাদের। তবে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে এদিন কোন মন্তব্য করতে চান নি রাহুল গান্ধি। মঙ্গলবার সংসদের বাইরে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘এখনই মন্তব্য করব না।’’ 

মোদির এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি। তিনি বলেন, এই বিল আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি। সেই সময় বর্তমান শাসক দলের সাংসদরাই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি এখন এই বিল সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে সকলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। যার প্রতিবাদ জানান শাসকদলের সাংসদেরা। 

প্রসঙ্গত বলা যায়, বিধানসভায় মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন পরই উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজীব গান্ধি । রাজীব গান্ধির পর কংগ্রেসের আরও দুই প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও এবং মনমোহন সিংহও এই বিল পাশ করাতে উদ্যোগী হন। উদ্যোগ নেন সোনিয়াও । তিনি এবং রাহুল গান্ধি কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠি লিখে মহিলা বিল পাশ করাতে উদ্যোগী হতে বলেন। এখন মোদি সরকার বিলটি পাশ করিয়ে রাজনৈতিক কৃতিত্বের দাবিদার হতে পারে বলে পাল্টা প্রচার শুরু করে দেয় কংগ্রেস। দলের সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জোরদার প্রচার শুরু হয়। অধীরের পরই বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি পাল্টা দাবি করেন, অধীর অসত্য তথ্য দিচ্ছেন। এদিন বিরোধীদের হই-হট্টগোলের জেরে বুধবার পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন।

উল্লেখ্য, বিরোধীরা একযোগে দাবি করেছিলেন যাতে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশনে নারী সংরক্ষণ বিল পাশ করানো হয়। কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এই বিল পেশ হলে তারা তা সমর্থন করবেন। এদিকে বিশেষ অধিবেশনের জন্য তালিকাভুক্ত বিলগুলির মধ্যে  নারী সংরক্ষণ বিলের উল্লেখ ছিল না। সোমবার বিশেষ অধিবেশনের পর সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের বৈঠক বসে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর  নেতৃত্বে বিলটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ১০০ মিনিটের ক্যাবিনেট বৈঠকের পর প্রথা অনুযায়ী কোনও সাংবাদিক সম্মেলন হয়নি। এদিকে বিল অনুযায়ী, লোকসভা এবং সব রাজ্যের বিধানসভায় মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ৩৩ শতাংশ আসন। এদিকে তফশিলি জাতি বা তফশিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনগুলির মধ্যেও এক তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত থাকবে এসসি বা এসটি নারীদের জন্য।