উত্তরকাশী, ২৯ নভেম্বর – দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গোটা দেশের নজরে ছিল উত্তরকাশীর ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে আনার যুদ্ধ। টানা ১৭ দিন ধরে সেই যুদ্ধে সামিল হয়েছে ১৫ টি উদ্ধারকারী দল, লড়াই চালিয়েছেন ৬৫২ জন উদ্ধারকর্মী। দীর্ঘ লড়াই শেষে মুক্তি এসেছে। শ্রমিকদের উদ্ধারের পর জানা গেছে কিভাবে তাঁরা টানেলের বাইরে তাঁদের আটকে পড়ার খবর পাঠান। এক সংবাদ মাধ্যমে টানেলের সেই দিনগুলির অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে প্রথম দিনের দুর্ঘটনার সেই মুহূর্তের উপলব্ধি ভাগ করে নেন অখিলেশ সিংহ।
অখিলেশ জানান, রাতে টানেলে কাজ সেরে ১২ নভেম্বর ভোর হতেই বাড়ি ফেরার পথ ধরেছিলেন তিনি। টানেল থেকে বেরিয়ে আসার সময় আচমকা ভয়ঙ্কর শব্দে থমকে যান অখিলেশ। চোখের সামনেই টানেলের একাংশ ধসে পড়তে দেখেন তিনি। পরক্ষণেই নিকষ কালো অন্ধকারে ডুবে নির্মীয়মান টানেলটি।
টানেলের ভিতরে অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে, হাওয়া-বাতাসহীন সেই পরিসরে টানা ১৮ ঘণ্টা কাটিয়েছেন ৪১ জন শ্রমিক। তখন তাঁরা একে অপরকে দেখতেও পাচ্ছিলেন না । বাঁচার আশা তখন তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন।কারণ, তাঁরা জানতেন যে তাঁরা যে ধস নেমে টানেলে আটকে রয়েছেন, সে খবর বাইরের কেউই জানে না। সেই সময় তাঁদের মাথায় আসে বিশেষ প্রশিক্ষণের কথা। অখিলেশ জানান, টানেলে কাজ করার সূত্রে তাঁদের আগেই বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, তা শেখানো হয় তাঁদের। চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেই কৌশলই কাজে লাগান শ্রমিকেরা। সুড়ঙ্গের ভিতর থেকে বাইরে পাঠানো হয় জলের সঙ্কেত। যা দেখে বাকিরা বুঝতে সক্ষম হন, এ হল শ্রমিকদের ‘ ‘বিপদ-বার্তা’ ।
কি সেই জলের সঙ্কেত ? অখিলেশ জানান, টানেলের ভিতর থেকে একটি জলের পাইপ খুলে দিয়েছিলেন আটকে পড়া শ্রমিকেরা। সেই জল বাইরে পৌঁছতেই বাকিরা সঙ্কেত পান। তারপরই শুরু হয়ে যায় শ্রমিকদের উদ্ধার প্রক্রিয়া। অখিলেশ বলেন, তাঁদের ধারণা ছিল, টানেলে আরও বেশ কিছু দিন আটকে থাকতে হবে ।
উদ্ধারকাজ শুরু হওয়ার পরই তাঁদের মনে আশার সঞ্চার হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে যেভাবে উদ্ধারকারী দল তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু তৈরী করে তাঁদের সবরকমভাবে সাহায্য করে এসেছেন তাতে কৃতজ্ঞ তাঁরা। কিন্তু উদ্ধারের পর এখন শ্রমিকেরা চান দীর্ঘ ছুটি। অখিলেশ জানান , ‘‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে গেলে বাড়ি যাব। এক থেকে দু’মাসের টানা ছুটি নেব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব আগামী দিনে আমি কী করব।’’
অখিলেশ তাঁর কথা জানিয়েছেন। বাকি ৪০ শ্রমিকও মানসিক ভাবে ক্লান্ত , বিধ্বস্ত। পেট চালাতে কাজ তো করতেই হবে। আগামী সেসব দিন আবার অনিশ্চিত। আপাতত শুধুই বিশ্রাম।