দিল্লি, ২৯ আগস্ট – জম্মু ও কাশ্মীর কবে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে, কেন্দ্রের কাছে জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ মঙ্গলবার এ বিষয়ে ‘নির্দিষ্ট সময়সীমা’ জানাতে বলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে।
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হয় জম্মু ও কাশ্মীর থেকে। পাশাপাশি লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজ্যের মর্যাদা হারিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরও। চার বছর পরও রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি জম্মু ও কাশ্মীরকে। এই বিষয়ে এবার কেন্দ্রকে প্রশ্ন করল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে সোমবার কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীরকে অস্থায়ী ভাবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। একে ফের রাজ্যের মর্যাদা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে একাধিক মামলা হয়। সেই মামলাগুলি একত্র করে গত ২ জুলাই থেকে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে শুরু হয়েছে ধারাবাহিক শুনানি।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রের কাছে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায়, জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে কি কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিয়ে কেন্দ্রের পরবর্তী পরিকল্পনা কী ? সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে বলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। ৩১ অগস্ট এই নিয়ে পূর্ণাঙ্গ জবাব দেবেন বলে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউল, বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সূর্য কান্ত। শুনানিপর্বে কেন্দ্রের আইনজীবী, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরকে বিভাজিত করে ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে’ পরিণত করা ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’। মঙ্গলবার শুনানিপর্বে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’র কবে স্থায়ী সমাধান হবে? পাশাপাশি, বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘কবে জম্মু ও কাশ্মীর আবার রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে, সে বিষয়ে সময়সীমা জানাক কেন্দ্র।’’
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছেন,”আমি এ বিষয়ে যা তথ্য পেয়েছি, সেই তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ব্যাপারটা স্থায়ী নয়। আশা করছি দ্রুত এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে তথ্য আমি দিতে পারব।
এদিকে সোমবার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ভারতীয়দের তিনটি মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল অনুচ্ছেদ ৩৫এ। প্রসঙ্গত, ৩৭০ ধারার পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৫এ ধারাও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। অনুচ্ছেদ ৩৫এ-র অধীনে ২০১৯ সালের আগে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকতেন জম্মু ও কাশ্মীরের ‘স্থায়ী’ বাসিন্দারা। ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ৩৫এ ধারা। এই আবহে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পর্যবেক্ষণ, ৩৫এ ধারার জেরে ভারতীয় নাগরিকরা তিনটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে। চন্দ্রচূড়ের মতে, ১৬(১) ধারার অধীনে দেশের সব নাগরিককে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়া হয়, ৩৫এ ধারায় সেই অধিকার খর্ব হচ্ছিল। তাছাড়া ১৯(১)(এফ) ধারায় দেশের সব নাগরিককে যেকোনও জায়গায় সম্পত্তি কেনার অধিকার দেওয়া হয়, তা খর্ব হচ্ছিল , এবং ১৯(১)(ই) ধারায় দেশের নাগরিকদের যেকোনও জায়গায় বসাবসের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ৩৫এ ধারায় তাও খর্ব হয়।