“হিংসা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে”, ভাঙড়ে গিয়ে বার্তা দিলেন রাজ্যপাল
ভাঙড়, ১৬ জুন – পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নের শেষ দিনে নজিরবিহীন হিংসাত্মক তান্ডবের সাক্ষী থেকেছে রাজ্যবাসী। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার তান্ডবলীলা চলে ভাঙড়-এর বিভিন্ন এলাকায় যার জেরে প্রাণ যায় তিনজনের। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন ঘিরে বৃহস্পতিবার তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে এক জন আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা। অপর দু’জন তৃণমূলের কর্মী রশিদ মোল্লা এবং রাজু নস্কর। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই কড়া বার্তা দেন রাজ্যপাল। এক বিবৃতি প্রকাশ করে রাজ্যপাল লেখেন, ‘‘নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এতে আমি স্তম্ভিত। নির্বাচনে জয় নির্ভর করে ভোটের সংখ্যার উপর। মৃতদেহের সংখ্যার উপর নয়।’’ এর পরেই রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত। তার মানে গণতন্ত্র আক্রান্ত। সাধারণ মানুষ আক্রান্ত। দেশের সংবিধান আক্রান্ত। নতুন প্রজন্মও আক্রান্ত। গণতন্ত্রে হিংসার কোনও জায়গা নেই। ’’
শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজভবন থেকে ভাঙড়ের উদ্দেশে রওনা হন রাজ্যপাল। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ভাঙড়ে পৌঁছন। এলাকায় জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।বিজয়গঞ্জ বাজার, ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও অফিস, মেলার মাঠ, কাঁঠালিয়া বাজার-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। বৃহস্পতিবার সেখানে হিংসা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে অগ্নিদগ্ধ্ দোকান, গাড়ি দেখে তা বোঝার চেষ্টা করেন। যান ভাঙড় ২ বিডিও অফিসেও। বৃহস্পতিবার এখানেই আইএসএফ প্রার্থীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। সেসব নিয়ে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল। সবিস্তারে রিপোর্ট নেন। যে সব গ্রামে বোমা পড়েছিল, সেই সব গ্রামে ঢুকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি দোভাষীর সাহায্য নেন। বৃহস্পতিবার মুহুর্মুহু বোমা-গুলির শব্দে যেসব এলাকা উত্তপ্ত ছিল , আতঙ্কের বাতাবরণ ছিল সেই আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি এলাকার মানুষ । স্থানীয়দের কাছ থেকে সেসব শুনে, তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন রাজ্যপাল। প্রায় ঘণ্টাখানেক ভাঙড়ের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ফের কলকাতায় ফিরে আসেন সিভি আনন্দ বোস।
ভাঙড়ে গিয়ে আইএসএফ কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন রাজ্যপাল। মনোনয়নপত্রে জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানান আইএসএফ কর্মীরা।
রাজ্যপালের ভাঙড় সফরকে ‘সাধুবাদ’ জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল যে ভাবে ভাঙড়ে গেলেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এই পদক্ষেপ শুভবার্তা দেয়। রাজ্যপালকে নিশ্চিত করতে হবে যে, বাংলায় সকলে নির্ভয়ে ভোটে অংশ নিতে পারবেন । তা না হলে, মানুষের আসল কাজ হবে না। সন্ত্রাসের বাংলা হয়ে গিয়েছে এখন।’’