বেঙ্গালুরু, ৪ সেপ্টেম্বর – চাঁদের মাটি ছেড়ে ফের শূন্যে লাফ বিক্রম ল্যান্ডারের। এরপর আগের অবস্থান বদলে আবার চাঁদের মাটিতে আলতো অবতরণ করল ইসরোর পাঠানো ভারতের চন্দ্রযান -৩। যেন ঘুমিয়ে পড়ার আগে নিজের শক্তি পরীক্ষা করে নিল সে। ইসরো টুইট করে জানায় , চাঁদের মাটিতে ফের বিক্রম ল্যান্ডারের ইঞ্জিন চালু করা হয়। সেই কারণেই চাঁদের মাটি ছেড়ে লাফ দিয়েছে ল্যান্ডারটি মাটি থেকে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠে কিছু দূরে অবতরণ করে। ইসরোর নিয়ন্ত্রণে থেকেই এই কাজ করে বিক্রম। আগের অবস্থান থেকে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূরে গিয়ে নামে বিক্রম। ইসরো সেই মুহূর্তের একটি ভিডিয়োও প্রকাশ করে।
ইসরো জানিয়েছে, যে সমস্ত উদ্দেশ্য নিয়ে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছুঁয়েছিল, তা সফল হয়েছে। এর পরেও প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রম। ইসরোর নির্দেশেই ফের ল্যান্ডারটি লাফ দিয়ে আবার অবতরণ করে দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও সফল হয়েছে সে। ইসরো সূত্রে জানা গিয়েছে , ভবিষ্যতে চাঁদের মাটিতে মহাকাশচারীর অভিযান অথবা ভিন্ন কোনও অভিযানে এই পরীক্ষা কাজে লাগতে পারে । বিক্রমের এই পরীক্ষা ‘হপ এক্সপেরিমেন্ট’ বলে নামকরণ হয়েছে।
কিন্তু কেন ফের অবতরণ করানো হল বিক্রম ল্যান্ডারকে ? ইসরোর মতে, এই ‘কিক-স্টার্ট’ ভবিষ্যতের মহাকাশচারী চন্দ্রযানের ফিরে আসার ইঙ্গিতবাহী। ভবিষ্যতে চাঁদের মাটিতে ফের অবতরণ করবে ভারত। অবতরণ করবে মানুষও। এই আশাই জাগিয়ে তুলল বিক্রমের ফের চাঁদের মাটিতে অবতরণ। বিক্রমের সব যন্ত্রপাতি স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে এবং সম্পূর্ণ সঠিক অবস্থায় রয়েছে। ল্যান্ডারের সঙ্গে চ্যাস্টে, ইলসার মতো যে পেলোডগুলি ছিল, সেগুলিকে গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। রোভারকে আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘ঘুমের দেশে’।
ল্যান্ডার মডিউলের পেলোডগুলি অবতরণের পর থেকেই কাজ করেছে। ইলসা, চ্যাস্টে, রম্ভা এবং অ্যারের কৌশলে প্রতিনিয়ত চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চ্যাস্টে চাঁদের মাটির তাপমাত্রা মেপেছে, ইলসা দিয়ে চাঁদের কম্পন টের পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। লেজ়ার-ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেক্ট্রোস্কোপ নমুনা সংগ্রহ করে তা লেজ়ার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করে চাঁদের মাটির উপাদানের বিশ্লেষণ করেছে। এলআইবিএসের মাধ্যমেই চাঁদের বুকে সালফার-সহ বেশ কিছু খনিজের হদিস পেয়েছে প্রজ্ঞান।
চাঁদে দিনে তাপমাত্রা প্রায় ২০০ ডিগ্রির কাছে পৌঁছে যেতে পারে, রাতে হিমাঙ্কের প্রায় ১৫০ ডিগ্রি নীচে নেমে যায়। এই তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু অরবিটর, বিক্রম বা প্রজ্ঞানে বসানো যাবতীয় যন্ত্রপাতি যাতে খারাপ না-হয়পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। রাত নামলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রির নীচে নেমে যাবে। হিমশীতল তাপমাত্রায় অন্ধকারে কাজ করতে পারবে না বিক্রম-প্রজ্ঞান । তাই তাদের হাইবারনেশনে পাঠিয়ে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা বলছেন বিক্রম-প্রজ্ঞানের মৃত্যু হবে না। ১৪ দিন পরে আবার যখন সূর্যের ক্ষীণ আলোর রশ্মি দক্ষিণ পিঠে আসবে তখন আবার জেগে উঠতে পারে তারা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি সে সম্ভাবনা সফল হয় এবং বিক্রম-প্রজ্ঞান নিজে থেকেই অ্যাকটিভ হতে পারে তাহলে সেটা হবে ইসরোর সবচেয়ে বড় সাফল্য। এমনভাবেই বিক্রম আর প্রজ্ঞানের যন্ত্রপাতি তৈরি হয়েছে, এতটাই আধুনিক পদ্ধতিতে গড়েছেন বিজ্ঞানীরা যে ১৪ দিন নিষ্ক্রিয় থাকার পরেও নিজে থেকেই জেগে উঠবে তারা। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর আবার চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের আলোয় আলোকিত হবে। সেই সময় আবার জেগে উঠবে বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান। সেই আশাতেই রয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তবে চাঁদ থেকে আর ফিরবে না বিক্রম ও প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটিই শেষ দিন পর্যন্ত তাদের ঘরবাড়ি হবে ।