ট্রেনে হৃদরোগে আক্রান্ত উপাচার্য, বিচারকের গাড়ি ছিনতাই করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে এফআইআর
SNS
দিল্লি, ১২ ডিসেম্বর – চলন্ত ট্রেনে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় উপাচার্যকে তড়িঘড়ি বিচারকের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান পড়ুয়ারা। অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে এক বিচারকের গাড়ি ব্যবহার করতে হয় তাঁদের। পড়ুয়াদের মানবিক মুখ দেখা গেলেও, মানবিকতার পরিচয় মেলেনি ওপর তরফ থেকে । পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উত্তর প্রদেশের ঝাঁসির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জিত সিং যাদব। বয়স ৫৮ বছর । তিনি রাজস্থানের বিকানেরের বাসিন্দা। দিল্লি থেকে রবিবার রাতে গোয়ালিয়রগামী একটি ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন ওই উপাচার্য । সেই সময় হঠাৎই ট্রেনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।উপাচার্যের সঙ্গে ওই ট্রেনেই ভ্রমণ করছিলেন উত্তর প্রদেশের ঝাঁসির ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পড়ুয়া। উপাচার্যকে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন তাঁরা। গোয়ালিয়র স্টেশনে ট্রেন থামতেই উপাচার্যকে নিয়ে দ্রুত নেমে পড়েন পড়ুয়ারা। রঞ্জিত সিং যাদবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে খবর দেওয়া হয়।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও অ্যাম্বুলেন্স এসে না পৌঁছনোয় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পড়ুয়ারা। উপাচার্যের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এই সময় পড়ুয়াদের মধ্যেই একজনের নজরে পড়ে গোয়ালিয়র স্টেশনের পাশেই এক ব্যক্তি গাড়ি বের করছেন। পুরো ঘটনা জানিয়ে উপাচার্যকে তাঁর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি গাড়ি দিতে অস্বীকার করেন। যদিও নিরুপায় হয়ে উপাচার্যের প্রাণরক্ষায় ওই গাড়িতে করেই স্থানীয় একটি হাসপাতালে পড়ুয়ারা উপাচার্যকে নিয়ে গেলে, তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
পরে জানা যায়, যে গাড়িটিতে করে উপাচার্যকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই গাড়িটি ছিল মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব এস কালগাঁওকরের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিচারপতির অভিযোগের ভিত্তিতে যে হাসপাতালে উপাচার্যকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোমবার সেখানে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু পড়ুয়ারা গাড়ি এবং তার চাবি দিতে অস্বীকার করেন।
এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন পড়ুয়ারা। অবশেষে অজ্ঞাত পরিচয় পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়। চাবি ও গাড়ি যদি পড়ুয়ারা ফেরত দিত, তাহলে এফআইআর দায়ের করা হত না বলে জানিয়েছেন গোয়ালিয়র পুলিশের এক কর্তা।
দিল্লিতে একটি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য-সহ পড়ুয়ারা ফিরছিলেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিক। পড়ুয়াদের এখনও সনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্তা। পড়ুয়ারা উপাচার্যের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় যে কোন উপায়ে সচেষ্ট হন। কিন্তু তা সফল হয়নি। উপরন্তু হেনস্থার শিকার হতে হল তাঁদের।