কলকাতা, ২৭ জুন – হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের স্ত্রী বাণী ভদ্রের। সোমবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। দীর্ঘ দিন ধরেই একাধিক শারীরিক ব্যাধিতে ভুগছিলেন তিনি। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র গ্রেফতার হওয়ার আগে তাঁর হাঁটু প্রতিস্থাপন হয়। স্ত্রীর মৃত্যুতে প্যারোলে বাড়িতে ফিরতে পারেন সুজয়কৃষ্ণ। যদিও তাঁর আইনজীবীর দাবি, এখনও পর্যন্ত সেরকম কোন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। ২৮ জুন অবধি তাঁর জেল হেফাজত হয়েছে। আপাতত প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার নিউ আলিপুরের বাড়িতে মৃত্যু হয় বাণী ভদ্রের। দীর্ঘদিন ধরেই নানা রকম শারীরিক সমস্যা ছিল বাণীদেবীর। স্ত্রীয়ের দেখাশোনা করতেন সুজয় ভদ্র নিজেই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় স্বামী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র জেল হেফাজতে থাকায় বীণা ভদ্রের দেখাশুনার দায়িত্ব ছিল তাঁর মেয়ের হাতে। সূত্রের খবর, স্ত্রীর শেষকৃত্যের জন্য সাময়িক ভাবে জেলমুক্ত করা হতে পারে সুজয়কৃষ্ণকে।
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের প্রায় বয়স ৫৭ বছর । স্ত্রীরও বয়সও কাছাকাছি। এই বয়সে স্বামীর এমন টানাপোড়েনে মানসিককভাবে ভেঙে পড়ছিলেন বাণীদেবী। বাণী ভদ্র এক সংবাদমাধমে সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, “কোনও দুর্নীতিতে উনি যুক্ত নন। এটা হতেই পারে না। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।”
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত ৩০ মে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন সুজয়। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। তদন্তকারী আধিকারিকদের আরও দাবি, কুন্তল জানিয়েছেন, পার্থর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে তাঁর কাছ থেকে প্রথমে ৭০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন সুজয়। সুজয়ের কথাতেই তিনি পার্থকে আরও ১০ লক্ষ টাকা দেন।
ইডির তদন্তে আরও জানা যায়, হাওয়ালার মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি টাকা নিজের বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, হাওয়ালার কোটি টাকার বিনিময়ে প্রচুর জমি, সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। তাঁর নামে ১০০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের।
তদন্তকারীরা আরও দাবি করেন, টাকার বিনিময়ে বহু প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন কালীঘাটের কাকু। সেই প্রার্থীদের টেটের অ্যাডমিট কার্ড, রেজাল্ট পাঠিয়েছিলেন মানিককে। কিন্তু সেই তথ্য অস্বীকার করেন সুজয় ভদ্র।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চলাকালীন সুজয়ের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, ‘কাকু’র স্ত্রী অসুস্থ। স্ত্রীর দেখাশোনা করেন সুজয়। যদিও সুজয়ের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ফলে শেষ দিনগুলিতে স্ত্রীয়ের সঙ্গে দেখাও হয়নি তাঁর। একাকী বিদায় নিলেন সুজয় ভদ্রের স্ত্রী বাণী ভদ্র।