তেল আভিভে যেতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন 

তেল আভিভ, ১৬ অক্টোবর – আকাশপথে হামাসের হামলা ঠেকাতে নতুন অস্ত্র ‘আয়রন বিম’ কাজে লাগাচ্ছে ইজরায়েল। এই শক্তিশালী অস্ত্র এতদিন ইজরায়েলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে ছিল।  এবার সেই অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু  করা হল। লেজ়ার অস্ত্রের মাধ্যমে দেশের চারিদিকে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে ‘আয়রন বিম’। হামাসের গোলা, রকেট এবং মর্টার ইজ়রায়েলের দিকে ছুটে এলেই সঙ্গে সঙ্গে তা আকাশেই ধ্বংস করছে। মধ্য ইজ়রায়েলে হামাসের বেশ কয়েকটি রকেট এবং মর্টারকে ধ্বংস করেছে এই লেজ়ার অস্ত্র। অনেক দূরের রকেটও নিমেষে ধ্বংস করছে এই অস্ত্র। ৭ কিলোমিটার দূরত্বের কোনও লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে সক্ষম এই লেজ়ার অস্ত্র। ‘আয়রন বিম’ থেকে যখন লেজ়ার রশ্মি বেরিয়ে শত্রুপক্ষের রকেট, ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে, সেই লেজ়ার রশ্মির এক বারের ব্যবহারে খরচ হয় ভারতীয় মুদ্রায় দেড় লক্ষ টাকারও বেশি। এক একটি লেজ়ার ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। ‘আয়রন বিম’ লক্ষ্যবস্তুকে কয়েক সেকেন্ডে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

এদিকে যুদ্ধের শুরু থেকেই ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু গাজায় হামলা নিয়ে হঠাৎ অবস্থান বদল করেছে আমেরিকা। ইজরায়েলকে গাজা দখল করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই প্রথম ইজরায়েলের বিরোধিতা করে কড়া অবস্থান আমেরিকার। অন্যদিকে অপর একটি সূত্রে খবর, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর আমন্ত্রণে যুদ্ধের মাঝেই তেল আভিভে যেতে পারেন জো বাইডেন।

এদিকে, আর অপেক্ষা করতে রাজি নয় ইজরায়েলি সেনা বা আইডিএফ। মিলিটারির মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট রিচার্ড হেচট ও ড্যানিয়েল হাগারি জানান, গাজায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত সেনা। সবুজ সঙ্কেত মিললেই সর্বশক্তি দিয়ে গাজায় হামাসের উপরে হামলা চালানো হবে।


সূত্রের খবর, গাজায় যাতে হামলা না চালানো হয়, তার জন্য় রাষ্ট্রপুঞ্জ ও সদস্য় একাধিক দেশ ইজরায়েলের উপরে চাপ সৃষ্টি করছে। অন্তত গাজা ছেড়ে সমস্ত নাগরিক চলে না যাওয়া অবধি যেন হামলা বন্ধ রাখা হয়, এমনটাই দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে হামাসের হাতে বন্দি নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

বর্তমানে গাজা সীমান্তে মিসাইল, ট্যাঙ্কার, সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইজরায়েলি সেনা। জল ও আকাশপথে হামলা চালানোর জন্যও যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ইজরায়েলের শীর্ষকর্তারা সবুজ সঙ্কেত দিলেই মুহূর্মুহূ গোলাবর্ষণ করা হবে গাজা স্ট্রিপ ও তার আশেপাশের এলাকার উপরে।

যুদ্ধের শুরু থেকেই ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। রবিবার আমেরিকা থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দ্বিতীয় রণতরী ইজরায়েলে পৌঁছয়। তার আগে শনিবারও ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুদ্ধে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, ইজরায়েল হামাসকে দমন করার জন্য গাজায় সবদিক থেকে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ একাধিক সদস্য দেশ। গাজায় হামলা চালালে মানব সঙ্কট দেখা দিতে পারে, এমনটাই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানো নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে গাজায় হামলা করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন বাইডেন। 

একটি মার্কিন সংবাদমাধ্য়মে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইজরায়েলকে গাজা স্ট্রিপে হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেন । তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এটা খুব বড় ভুল হবে। গাজায় যা হয়েছে, তা আমার মতে হামাসের জন্য হয়েছে। তবে হামাসের কট্টরপন্থী একটি অংশ সমগ্র প্যালেস্তাইনবাসীর প্রতিনিধিত্ব করে না। আমার মনে হয়, ইজরায়েলের পুনরায় গাজা দখল করা ভুল হবে।”

তবে হামাসদের শেষ করার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেন বাইডেন। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে ইজরায়েল যুদ্ধের নিয়ম মেনেই পদক্ষেপ করবে।”

অন্যদিকে, বাইডেন প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইজরায়েলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আমন্ত্রণে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তেল আভিভে যেতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।