দুই প্রিসাইডিং অফিসারকে শোকজ, গ্রেফতার আট, ভোট শান্তিপূর্ণ বলে দাবি কমিশনের

ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আম জনতা (Photo: IANS)

নিজস্ব প্রতিনিধি — বৃহস্পতিবার কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রথম দফায় কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বলে কমিশন দাবি করেছে। নির্বাচনে অশান্তির জন্য মােট ৮জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দায়িত্ব না পালন করার জন্য কোচবিহারের শীতলকুচি ২৭২ নম্বর এবং দিনহাটার ৬ বাই ২১২ নম্বর বুথের দুই প্রিসাইডিং অফিসারকে শােকজ করেছে কমিশন। ইভিএম ভাঙচুর এবং বুথের মধ্যে বহিরাগতদের সঙ্গে কথা বলার দায়ে বিডিও’র রিপাের্টের ভিত্তিতে দুজনকে শােকজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। নির্বাচনী বিধিভঙ্গসহ একাধিক অভিযােগের ভিত্তিতে তিনজনের বরদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, দুই কেন্দ্রে গােলমালের চেষ্টা করেছে যারা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিন দিনহাটায় ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কমিশন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। কমিশনের অতিরিক্ত আধিকারিক সঞ্জয় বসু জানিয়েছেন, ভােট নিয়ে যারা গােলমাল করার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে কমিশন কোনও ক্রুটি রাখবে না। বৈদ্যুতিন চ্যানেলের মাধ্যমে যে সমস্ত ব্যক্তি গােলমালের চেষ্টা করেছে, তাদের ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রথম দফার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকেই কোচবিহারের বিভিন্ন বুথে অশান্তির ঘটনা ঘটে। আর তার প্রতিবাদে বিজেপি এবং বামপন্থী দলগুলি এসে কমিশনের কাছে নালিশ জানিয়ে যায়। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবেও শান্তিপূর্ণ ভােট হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে ৭০০ বুথ নিয়ে অভিযােগ জানানাে হয়েছে। বামেদের পক্ষ থেকে শতাধিক বুথে অনিয়মের অভিযােগ তােলা হয়েছে। বিরােধীদের অভিযােগ মতাে কোনও কেন্দ্রে পুননির্বাচন হবে কিনা, শুক্রবার পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে সেসম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিশনের হিসাব মতে দুটি কেন্দ্রে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভােটের হার ছিল ৮০.৮৫ শতাংশ। কোচবিহারে ৮০.১১ এবং আলিপুরদুয়ারে ৮১.৫৮ শতাংশ ভােট পড়েছে। বিকাল তিনটে পর্যন্ত দুটি কেন্দ্রে ভােটের হার ছিল ৭১.৪৪ শতাংশ।


এদিন রাজ্য নির্বাচনী দফতরে এডিজি আইনশৃঙ্খলা সিদ্ধিনাথ গুপ্তাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। তিনি বিরােধীদের যাবতীয় অভিযােগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন ভােট শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। কোথাও কোনও বড় অশান্তির ঘটনা ঘটেনি।

সিদ্ধিনাথ গুপ্তা জানান, যারা গােলমালের চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি এও জানান, কোচবিহারে সাত জন এবং আলিপুরদুয়ারে মােট একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মাথাভাঙায় গাড়ি ভাঙচুর সহ অশান্তির ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, সমস্ত বুথেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। ভােট চলাকালীনই যাবতীয় অভিযােগ সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কমিশনের তরফে জানানাে হয়েছে, দিনহাটার একটি বুথে ইভিএম দীর্ঘক্ষণ বিকল হয়েছিল।শেষ পর্যন্ত সেই ইভিএম পরিবর্তন করে নতুন ইভিএমে ভােট হয়েছে। আরিজ আফতাব এও জানিয়েছেন, দিনহাটার ওই বুথে ৬৬০টি ভােট পড়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে ভিভিপ্যাটসহ ইভিএমের কোনও ক্ষতি হয়নি। নির্বাচন চলাকালীন বিজেপির পক্ষ থেকে জয়প্রকাশ মজুমদার, প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং বামেদের পক্ষ থেকে রবীন দেব সরকারের বিরুদ্ধে কমিশনের অফিসে অভিযােগ জানান। বামেদের পক্ষ থেকে ১৭০টি এবং বিজেপির পক্ষ থেকে ৭০০ বুথে পুনর্নিবাচনের দাবি করা হয়েছে। প্রথম দফার ভােট প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা করেছে রাজ্য সরকার বলে অভিযােগ করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। অন্যদিকে আগামী ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভােট। ওইদিন দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং রায়গঞ্জে ভােট হবে। দ্বিতীয় দফার ভােটের জন্য মােট ২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মােতায়েন করা হবে । কমিশনের হিসাব অনুযায়ী মেঘালয় থেকে ১০, সিকিম থেকে ৮, নাগাল্যান্ড ৫ এবং ত্রিপুরা থেকে ১ কোম্পানি বাহিনী নিয়ে আসা হবে দ্বিতীয় দফার ভােটের জন্য।