ইমফল, ১ জুন– অগ্নিগর্ভ মণিপুরে পরিস্থিতি সামাল দিতে যেতে হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। একের পর এক মৃত্যু, দাঙ্গায় মণিপুর কিছুটা থিতু হয়েছে সবে আর এর মধ্যেই নতুন দাবি নিয়ে হাজির ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মা। বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড আন্দোলনকে জোরালো করার আহ্বান জানিয়ে তিনি ত্রিপুরায় আলাদা আদিবাসী রাজ্যের ডাক দিলেন। আগামী জুলাইয়ে তাঁর দল তিপ্রা মোথা সর্বদলীয় সম্মেলন করে তাদের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন দেববর্মা। গতকাল বুধবার রাতে একটি অডিও বার্তায় এ কথা জানান তিপ্রা মোথার প্রধান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর সফরের শেষ দিনে পৃথক রাজ্যের দাবি তুললেন দেববর্মা। চলতি জুনে কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতাকারী প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা এ কে মিশ্র তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেন কি না, সেটাই এখন দেখার।
দেববর্মা বলেন, পুরো ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ১ হাজার ২০০ মানুষ আগরতলায় এসে দলের নেতাদের তাদের সমস্যার কথা জানাবে। দলের নেতারা তাদের কথা শুনবেন এবং একেবারে গ্রাম স্তর থেকে শুরু করে, পঞ্চায়েত এবং রাজ্যস্তরে নতুন করে কমিটি গঠন করা হবে। পুরোনো কমিটির খোলনলচে বদলে ফেলা হবে।
মহারাজা দেববর্মা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় অসংখ্য মানুষ আমাদের পাশে ছিলেন। কিন্তু তাঁরা এখন বাড়িতে বসে রয়েছেন। এটা যাতে না হয়, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’
দেববর্মা জেলা স্তরের নেতা ও দলের এমএলএদের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, দলীয় কর্মীদের যাতে বুথ পর্যায় সক্রিয় রাখা যায়, তা মাথায় রেখে কর্মসূচি নিতে হবে।
তিপ্রা মোথা নেতা আরও বলেন, ‘একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, বৃহত্তর ত্রিপুরা রাজ্য গঠনের দাবির কথা শুনে মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই দাবি থেকে সরে এসে আমরা আপস করতে পারি না।’
ত্রিপুরায় নতুন আদিবাসী দল তিপ্রা মোথা গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে ১৩টি আসন পায়। ভোট পায় প্রায় ২০ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিপিআইএম (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্ট) দল তাদের বিশ্লেষণে জানায়, তিপ্রা মোথা বামফ্রন্ট-কংগ্রেস জোটের ভোট টেনে নেওয়ায় জিতে গেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। যদিও নির্বাচনের আগে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস আংশিকভাবে তিপ্রা মোথাকে তাদের সহযোগী দল হিসেবেই দেখেছিল।
নির্বাচনের পর তিপ্রা মোথার পৃথক ও বৃহত্তর আদিবাসী রাজ্যের দাবি খতিয়ে দেখতে এবং আলাপ-আলোচনা করতে অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এ কে মিশ্রকে নিয়োগ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আগরতলায় গিয়ে দেববর্মার সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল মিশ্রর।
দেববর্মা বলেন, মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে এ আলোচনা পিছিয়ে গেছে। এ আলোচনা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের নতুন পৃথক রাজ্যের আন্দোলনের রাজনীতি কোন দিকে গড়ায়, জুলাইয়ে তিপ্রা মোথার ‘প্লেনারি’ বৈঠকে তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।