দলবিরোধী মন্তব্যের জেরে হুমায়ুন কবিরকে শো-কজ করল তৃণমূল

কলকাতা, ২৯ জুলাই – ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের জেরে কড়া পদক্ষেপ করল দল। হুমায়ুন কবিরকে শো-কজ করল তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব।শনিবার সকালে দলের তরফে শো-কজ়ের চিঠি গিয়ে পৌঁছয় তাঁর বাড়িতে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই হুমায়ুন কবির অস্বস্তি বাড়াচ্ছিল শাসক দলের। একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল বিরোধী কাজ করার অভিযোগে তাঁকে শো-কজ় নোটিস ধরানো হয়। মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায়ও জানান, তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে হুমায়ুনকে শো-কজ় করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিধানসভার অন্দরে নিজের বক্তৃতায় নাম না করেই পঞ্চায়েত ভোট এবং হিংসা সংক্রান্ত বিষয়ে হুমায়ুনের ভূমিকার সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগরে আমাদের দলের এক জন আছেন, যিনি মাঝেমধ্যেই হুঙ্কার দেন। গুন্ডামি করেন। আমাদের দলে থাকলেও কিন্তু তাঁর কাজকর্মকে সমর্থন করি না।’’ তার পরেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় বিধানসভায় শাসকদলের অন্দরে। এরপর শনিবার তাঁকে শো-কজ  নোটিস পাঠানো হয়। 

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের আগেই গত মঙ্গলবার বিধায়ক হুমায়ুন বিধানসভার কোন কোন পদে রয়েছেন, সেই বিষয়ে জানতে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বিধানসভায় দলের উপ মুখ্যসচেতক তথা বিধায়ক তাপস রায়ের কাছে জানতে চান। বর্তমানে বিধানসভার দু’টি স্থায়ী কমিটিতে রয়েছেন হুমায়ুন কবির। ‘পেপার লেড স্ট্যান্ডিং কমিটি’-র চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ দফতরের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন।


বাড়িতে শোকজ নোটিস পৌঁছনোর কথা স্বীকার করে নেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরও। তিনি এক সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘আমি এখন বহরমপুরে রয়েছি। এক ঘণ্টা আগে আমার বাড়ির ঠিকানায় চিঠি এসেছে। আমার ছেলে গুলাম নবি আজাদ সেই চিঠি সংগ্রহ করেছে।’ বিধায়ক জানিয়েছেন, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সই করা লেটারহেডে শোকজ নোটিস রিসিভ করেন তাঁর ছেলে। তিনি শনিবার জানান, ‘বহরমপুর থেকে ফিরে আমি নিশ্চয়ই সেটা পড়ব। রাজ্য নেতৃত্ব যা জানতে চেয়েছে, আমি যথাযথ সময়ে সেই শো-কজের উত্তর নেতৃত্বকে দেব।’

এদিকে শো-কজ নোটিস বাড়িতে পৌঁছানোর পর আরও সুর ছড়িয়েছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। বলছেন, ‘১৮ বছর বয়স থেকে শুরু করে আমি ৪৩ বছর ধরে রাজনীতি করি। যতদিন আমার শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে, রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকব।  ২০২০ সালে তিক্ততা ভুলে আমার আমি তৃণমূলের কাছে অঙ্গীকার করে বলেছিলাম, আমাকে দল করার সুযোগ দেওয়া হোক। নেতৃত্বও আমাকে দল করার সুযোগ দিয়েছে। নিজের এলাকায় না দিলেও পাশের বিধানসভায় প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ের সুযোগ দিয়েছে।’

উল্লেখ্য, ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে এর আগেও দলের তরফে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছিল। দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল তাঁকে। হুমায়ুন কবিরের কথায় সেই ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বলছেন,  ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে  অনেক ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দলের তৎকালীন মহাসচিব অন্যায়ভাবে আমাকে আত্মপক্ষ পর্যালোচনার সুযোগ না দিয়েই ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিলেন। আমার প্রতি অন্যায় হয়েছিল, অবিচার হয়েছিল।’ হুমায়ুন কবির অবশ্য বলছেন, আগামী দিনে তিনি শো-কজের যথাযথ উত্তর দিয়ে নেতৃত্বের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবেন। 

২০১৫ সালে দলনেত্রী মমতার বিরুদ্ধে মন্তব্য করলে তাঁকে শো-কজ করেন তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই শো-কজের জবাব না দেওয়ায় তাঁকে ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। ক্ষুব্ধ হুমায়ুন ফিরে যান কংগ্রেসে। এরপর কংগ্রেস ছেড়ে যোগদান করেন বিজেপিতে।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে প্রার্থীও হন তিনি। কিন্তু পরাজয়ের পরেই ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের হাত ধরে তৃণমূলে ফেরেন। বিধানসভা ভোটে ভরতপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হন।