কলকাতা, ১৫ জুলাই – উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটতেই তিনজন অধ্যাপককে ডেকে পাঠানো হল রাজভবনে। বর্ধমান, বিদ্যাসাগর ও বালুরঘাট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে ওই তিন অধ্যাপককে রাজভবনে ডেকে পাঠান হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এর আগে শুক্রবারই রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ম্যাকাউটের উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন গৌতম মজুমদার।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরেই রাজভবন-নবান্ন সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস শিক্ষা দফতরকে না জানিয়েই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিগত বেশ ১৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন। রাজ্যপাল শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা না করে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করায় তাঁদের বেতন–সহ অন্যান্য সমস্ত সুযোগসুবিধা বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার । এই নয়নে নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর। বলা হয়, অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ যে-আইনি। তাই তাঁরা বেতন-ভাতা পাবেন না।রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই এই নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য। সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের দ্বারা নিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধও জানান হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রীর তরফে। কিন্তু, তারমধ্যে মাত্র একজন বাদে বাকি দশজনই উপাচার্য পদে কাজে যোগদান করেছিলেন।
এরপর রাজ্যপাল নিযুক্ত উপাচার্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁরা যেন বেতন ভাতা গ্রহণ না করেন। সেই মর্মে উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে চিঠি পৌঁছায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের কাছে। সেখানে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট আইন ও তার বিধি মেনে উচ্চশিক্ষা দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই ওই নিয়োগগুলি করা হয়েছে, যা আইনত কখনওই বৈধ নয়।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু সেই মামলায় আদালতে ধাক্কা খেতে হয় রাজ্য সরকারকে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রাজ্যের ১১ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত বৈধ। দায়ের হওয়া মামলাটিও খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি উপাচার্যদের বেতন-সহ অন্যান্য যে সমস্ত বন্ধ করা হয়েছিল, সেগুলিও অবিলম্বে চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয় ডিভিশন বেঞ্চের তরফে।
এরপরেই রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ম্যাকাউটের উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক গৌতম মজুমদারকে ম্যাকাউটের উপাচার্য হিসেবে বেছে নেন আনন্দ বোস। শুক্রবার নিজের দায়িত্বভারও বুঝে নিয়েছেন গৌতমবাবু। সেক্ষেত্রে এবার এই তিন অধ্যাপককে ডেকে পাঠানও নতুন করে জল্পনা ছড়িয়েছে রাজ্যের শিক্ষামহলে।
এদিকে প্রাক্তন উপাচার্যদের একাংশ রাজপাল সি ভি আনন্দকে নিয়ে তাঁদের “গভীর যন্ত্রণা” প্রকাশ করেছেন । কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই আড়াই মাসের মধ্যে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির বা মাউকাটের একজন কার্যকরী উপাচার্য বদল করার সিদ্ধান্ত আনন্দ বোসের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন ।