আজ তৃতীয় দফার ভোট ১২টি রাজ্যে ও ২ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। রাজ্যওয়ারি হিসাব হলো অসম ৪, বিহার ৫, ছত্তিশগড় ৭, গোয়া ২, গুজরাত ২৬, জম্মু-কাশ্মীর ১, কর্ণাটক ১৪, কেরল ২০, মহারাষ্ট্র ১৪, ওড়িশা ৬, উত্তরপ্রদেশ ১০, পশ্চিমবঙ্গ ৫, দমন দিউ ১ ও দাদরা নগর হাভেলি ১টি আসনে। এরমধ্যে গুজরাত ও কেরলে আগামীকাল সবকটি আসনেই ভোট হচ্ছে। আজ এই ভোটে একদিকে যেমন গুজরাতে বিজেপির কিছুটা ভালো ফল করার কথা, অন্যদিকে ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্ণাটক, জন্ম ও কাশ্মীর, ছত্তিশগড় এই কটি রাজ্যে বিজেপি’র ফল আদৌ আশাপ্রদ হওয়ার কথা নয়। অসমে রাজ্যে সরকারের থাকার ফলে সেখানে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার কারণে বিজেপির ফলাফল কী দাঁড়ায় সেদিকে সকলের নজর।
আজ মঙ্গলবার রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ হবে পাঁচটি আসনে। যে আসনগুলিতে নির্বাচন হবে, তার মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, মালদা উত্তর ও দক্ষিণ এবং বালুরঘাট।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটে কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। তৃতীয় দফা ভোটের আগে অশান্তির মোকাবিলা করতে আগের দিনই সাত পুলিশ অফিসারকে বদলি করা হল। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদেরই তিন পুলিশ অফিসার রয়েছেন তৃতীয় দফার ভোটকে গুরুত্ব দিতে ১২.০৩ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এমনকী প্রয়োজনে একশো শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করানোর মতো প্রস্তুতি রয়েছে কমিশনের। মোট ৩২৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী তৃতীয় দফার ভোটে কাজ করবে। এর মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরে ৪, মালদহে ৮৯, মুর্শিদাবাদে ১২০, নদিয়ায় ৮, উত্তর দিনাজপুরে ৭ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
সকাল সাতটা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত ভোট দেওয়া হবে। মোট ৮৫২৮ টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন। দিল্লির কেন্দ্রীয় কমিশনের কর্তারা নজর রাখছেন ভোট প্রক্রিয়ার ওপর। অতিরিক্ত নির্বাচন আধিকারিক সঞ্জয় বসু জানিয়েছেন অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের জানা যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ভোট দিতে এসে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্সের বন্দোবস্ত থাকবে।
পাঁচটি কেন্দ্রে মোট ৮০ লক্ষ ২৩ হাজার ৮৪৬ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৪১ লক্ষ ৬ হাজার ১০ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৬২৪ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ২১২ জন। পাঁচটি কেন্দ্রে ৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ছয় জন।
বালুরঘাটে মুলত নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষ এবং বিজেপি’র ডা. সুকান্ত মজুমদারের মধ্যে। এ ছাড়া কংগ্রেসের সাদিক সরকার এবং বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে থাকছেন রণেন বর্মন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অর্পিতা আরএসপি প্রার্থী বিমলেন্দু সরকাররে পরাজিত করেছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত বালুরঘাটে ফের অর্পিতাকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই বিরোধিতা দেখা গিয়েছিল বিশেষ করে এই জেলার সভাপতি বিপ্লব মিত্র প্রকাশ্যেই অর্পিতা ঘোষাকে প্রার্থী করায় সোস্যাল মিডিয়াতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। বালুরঘাটের মানুষও অর্পিতার সেখানে অনুপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজীব ব্যানার্জি বালুরঘাটে একাধিক নির্বাচনী প্রচারসভা করেন অর্পিতা ঘোষের হয়ে। সেই ড্যামেজ কন্ট্রোল কতখানি কাজ করবে আজ তারই পরীক্ষা।
মালদা উত্তর কেন্দ্রে এবার দুই দলত্যাগীর মধ্যে জোর লড়াই হবে আজ ভোটে ময়দানে। এরমধ্যে মেসিম বেনজির নুর কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে গতবারের লোকসভা নির্বাচনে পরাস্ত করেছিলেন সিপিআই (এম) প্রার্থী খগেন মুর্মুকে। এবার এরা দুজনই দলবদল করেছেন। মৌসময় যোগ দিয়েছেন তৃণমুলে এবং খগেন মুর্মু বিজেপিতে। এখন দলবদল করার ফলে তাদের ভাগ্যবদল হয় কিনা তারই পরীক্ষা হবে আজ মঙ্গলবার। এছাড়া মালদা উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরীও রয়েছেন নির্বাচনী দোড়ে। বামপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিশ্বনাথ ঘোষ।
এবার মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে বামফ্রন্ট কোনও প্রার্থী না দেওয়ায় মূলত ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের মোয়াজ্জেম হোসেন, বিজেপি’র শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী এবং কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরী যার মধ্যে মূল নির্বাচনী লড়াই হবে। গত বছর কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরী বিজেপি প্রার্থীকে পরাস্ত করেছিলেন।
জঙ্গিপুরের নির্বাচনী লড়াইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি সিপিএম-এর প্রার্থী মোজাফ্ফর হোসেনকে ৮ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাস্ত করেছিলেন। এবছর জঙ্গিপুরে বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জুলফিকার আলি। এছাড়া এই কেন্দ্রে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন যথাক্রমে খলিলুর রহমান এবং মাফুজা খাতুন।
তৃতীয় দফার ভোটে সবচেয়ে নজরকাড়া কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ। ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্রে ভোটের ঠিক আগের দিন এই জেলার তিন পুলিশ অফিসারকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে পক্ষপাতের অভিযাোগে। এই কেন্দ্রের চার সংখ্যালঘু প্রার্থী হলেন, তৃণমূলের আবু তাহের খান, বিজেপির হুমায়ুন কবির, কংগ্রেসের আবু হেনা এবং বামফ্রন্টের বদরুদ্দোজা খান। এই চার প্রার্থীর মধ্যে জোর টক্কর হবে আজ। গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন সিপিআই (এম) প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান। এবার বিজেপি’তে যোগদান করা হুমায়ুন কবির লড়াইকে অনেকটা শক্ত করে দেবে বলে মনে করা হয়েছে।
তৃতীয় দফার নির্বাচনে এই পাঁচ কেন্দ্রের লড়াইতে তৃণমূল ও বিজেপি ছাড়া কংগ্রেস এবং বামপ্রার্থীরা রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।