কাজ অন্তিম পর্যায়ে, বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে উদ্ধারের আশা
SNS
উত্তরকাশী, ২৩ নভেম্বর – উত্তরকাশীর টানেল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্তও উদ্ধার করা সম্ভব হল না আটকে থাকা শ্রমিকদের। বার বার সময় দিয়েও নানারকম বাধার সম্মুখীন হওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকাজ। তবে এখন উদ্ধারকাজের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবে উদ্ধারকারী দল। বৃহস্পতিবার সকালে টানেল দেখতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তিনি বলেন,’ অগার মেশিনের সাহায্যে ৪৫ মিটার লম্বা একটি পাইপলাইন তৈরী করা হয়েছে। উদ্ধারকাজও এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে এখনও কিছু বাধা সামনে আসছে। তবে আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের উদ্ধার করা যাবে।’ তিনি বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞরা দিন-রাত এক করে কাজ করে চলেছেন। উদ্ধারকারীদের আশা, বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে শ্রমিকদের বের করে আনা যাবে। বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, অবশেষে লোহার রডটি কেটে সরানো গিয়েছে। আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে উদ্ধারকারীদের দূরত্ব আর মাত্র ছ’মিটার।
উত্তরকাশীর নির্মীয়মান সিলকিয়ারা টানেলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শেষ পর্যায়ের উদ্ধারকাজ চলছে। আমেরিকার ড্রিল মেশিনের সাহায্যে বুধবার রাত পর্যন্ত ওই ধ্বংসস্তূপের ৫০ মিটার পর্যন্ত খোঁড়া সম্ভব হয়। সুড়ঙ্গের ভিতরে বুধবার রাতেই ঢুকে পড়েছিলেন ২১ জন উদ্ধারকারী। তাঁরা সকলেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য। আশা করা হয়েছিল, বুধবার রাতেই বের করে আনা যাবে শ্রমিকদের। কিন্তু রাতে বেশি দূর এগোনো সম্ভব হয়নি। ১২ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে গিয়ে ১০ মিটার বাকি থাকতে আবার থেমে যায় ধ্বংসস্তূপ খোঁড়ার কাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়, টানেলের মধ্যে খননকার্যের সময় আচমকাই সামনে চলে আসে লোহার রড। খননযন্ত্র দিয়ে তা সরানো যায়নি। ফলে উদ্ধারকাজ বাধা পায়। রড কেটে রাস্তা ফাঁকা করতে আরও ঘণ্টা ছয় সময় লেগে যায়। রডটি কাটতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় উদ্ধারকারীদের। এ ছাড়াও, এক বার কাজ বন্ধ রাখতে হয় খননযন্ত্র অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠায় । ফলে তা ঠান্ডা করতে আরও কিছুটা সময় লেগে যায়।
সুড়ঙ্গে ধস নামার ফলে প্রায় ৬০০ মিটার ধ্বংসস্তূপের পিছনে আটকে পড়েছিলেন শ্রমিকেরা। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে খুঁড়ে সেই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা চলছে। যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে তার ভিতরে পাইপ ঢোকানো হচ্ছে। পাইপের ভিতর দিয়েই উদ্ধারকারীরা গভীরে প্রবেশ করছেন। সেখান দিয়েই বার করে আনা হবে শ্রমিকদেরও। এই পাইপ ঢোকাতেই বার বার বাধা আসছে।
পাথুরে মাটিতে ভেঙে পড়া ইস্পাতের ‘জঞ্জাল’ সরিয়ে আরও ১০ মিটার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে, সেখানে ইস্পাতের চওড়া পাইপ বসিয়ে আটক শ্রমিকদের নাগাল পাওয়া সময়সাপেক্ষ। কারণ, শুধু পাইপ বসানো নয়, জল-কাদা ঢুকে পড়া আটকাতে পাইপের জোড়-মুখ ঝালাইয়ের কাজ করতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের।
এদিন টানেলের কাজ দেখতে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিং। সুড়ঙ্গের বাইরেও উদ্ধারের প্রস্তুতি তুঙ্গে। বুধবার রাত থেকেই সেখানে এনে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। রয়েছেন একদল চিকিৎসকও। ওই এলাকার কাছে চিনিয়ালিসৌরে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৪১ জন শ্রমিকের জন্য একটি বিশেষ ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধারের পর পরিস্থিতি বুঝে প্রথমে তাদের ওই ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
এদিকে স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারাছন্ন ওই টানেলে এতগুলো দিন পার করতে দরকার চূড়ান্ত মানসিক জোর । জানা গিয়েছে, উদ্বেগ, আতঙ্ক, মৃত্যুভয় ভুলে থাকতে টানেলের ভিতরে কখনও চোর-পুলিশ, কখনও বা তাস খেলে সময় পার করতেন শ্রমিকরা। খাবারের পাশাপাশি পাইপ লাইনে তাস পাঠিয়েছিল উদ্ধারকারীদল। প্রায় দুই সপ্তাহ সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকায় পাঠানো হয় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি এবং সি ট্যাবলেট। এছাড়াও শ্রমিকদের কথা ভেবে গত কয়েকদিন অক্সিজেন, খাবার, ওষুধ ছাড়া পাঠানো হয়েছিল খৈনি। ৪০ জন শ্রমিকের মধ্যে অনেকেরই খৈনির নেশা রয়েছে। কোনওভাবেই যাতে তাঁদের মধ্যে উইথড্রয়াল সিনড্রম না দেখা দেয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা। গোটা উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার প্রেম পোখরিওয়াল। তিনি জানান, তাঁরা নির্দেশে শ্রমিকর মাঝেমাঝেই চিৎকার করে বলতেন ‘আমি শক্তিশালী ’।