• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

সমকামী বিয়েতে আইনি বৈধতা দিল না সুপ্রিম কোর্ট

দিল্লি, ১৭ অক্টোবর – দেশে সমকামী বিয়েতে বৈধতা দিল না সুপ্রিম কোর্ট।  মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সমকামীদের বিয়েতে আইনি বৈধতা দেননি।   এ বিষয়ে কেন্দ্রের কমিটিকে পদক্ষেপ করতে বলেছে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। আইনসভার হাতে বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এই বিষয়ে আইন তৈরী করতে হলে সংসদে করতে হবে।  প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, সমলিঙ্গ সম্পর্কের

দিল্লি, ১৭ অক্টোবর – দেশে সমকামী বিয়েতে বৈধতা দিল না সুপ্রিম কোর্ট।  মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সমকামীদের বিয়েতে আইনি বৈধতা দেননি।   এ বিষয়ে কেন্দ্রের কমিটিকে পদক্ষেপ করতে বলেছে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। আইনসভার হাতে বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এই বিষয়ে আইন তৈরী করতে হলে সংসদে করতে হবে।  প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, সমলিঙ্গ সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য কেন্দ্রের একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। তার মাধ্যমে ওই সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষিত করা হবে।   সেই সঙ্গে এও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সমকামী যুগলরা সন্তান দত্তক নিতে পারবেন না।

মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সমকামীদের বিয়েতে বৈধতা দিতে অস্বীকার করেন।   ৩: ২ অনুপাতে বিচারপতিরা বলেন , আইন সমকামী দম্পতিদের বিয়েতে বৈধতা দেয় না।  প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে পরিবর্তন আসে।’’ তিনি আরও বলেন,  ‘ আদালত ইতিহাসবিদদের কাজ করতে পারবে না । বিয়ে নামে প্রতিষ্ঠানটির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সতিদাহ প্রথা থেকে শুরু করে বিধবা বিবাহ কিংবা ভিন জাতে বিয়ে, সব নিয়মেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে। ব্যক্তিগত স্তরে যে কোনও কাজকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়। বিবাহ বর্তমানে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, আইন না থাকলে তা সম্ভব হত না।’’ সমকামকে শহুরে বিষয় নয় বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি।

সমকামী কিংবা এলজিবিটিকিউআইএ + সম্প্রদায়ের যে কোনও মানুষকে হেনস্থা করা বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানান, সমকামী  কাউকে তাঁদের যৌন পরিচয় জানার জন্য থানায় তলব করা যাবে না। তাঁরা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলে তাঁদের সেখানে জোর করে ফেরানো যাবে না। এই সম্প্রদায়ের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করার আগে পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। সমলিঙ্গে বিবাহ নিয়ে রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘’সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারেই লুকিয়ে রয়েছে জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষমতা।’ জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা প্রত্যেকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’’

ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় রায় পড়তে গিয়ে এও জানিয়েছেন, কোনও রূপান্তরিত মহিলা কোনও পুরুষকে বিয়ে করতে চাইলে অথবা কোনও রূপান্তরিত পুরুষ মহিলাকে বিয়ে করতে চাইলে তাতে বাধা নেই। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পুরুষ এবং মহিলা হিসেবেই দেখা যাবে।

টানা ১০ দিন ধরে শুনানি পর্বের শেষে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গত ১১ মে রায় স্থগিত রাখে । মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষ হয়। সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্য সদস্যেরা হলেন, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি এস নরসিংহ।

বিচারপতি কউল রায় দেওয়ার সময় বলেন, ‘‘বিশেষ বিবাহ আইনে সমলিঙ্গ মিলনকে অন্তর্ভুক্ত করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওই আইন পরিবর্তন করতে হলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’’ বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতোই বিচারপতি কউলও জানান, সমকামী যুগল বা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের উপর বৈষম্যবিরোধী একটি আইন দেশে প্রয়োজন। বিচারপতি ভট্ট তাঁর রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে বলেন, ‘‘কোনও বিয়ের স্বীকৃতি আইন ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিয়ের বিষয়ে আইন বিচারব্যবস্থা আনতে পারে না।’’বিচারপতি নরসিংহের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিয়ের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া সাংবিধানিক ভাবে অনুমোদনযোগ্য নয়।’’

নরেন্দ্র মোদি সরকার এবং  অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থান সরকার সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি বৈধতার দাবির বিরোধিতা করেছে। কেন্দ্রের তরফে সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি স্বীকৃতির বিরোধিতা করে জানানো হয়, এটি  ‘শহুরে অভিজাত সমাজের ভাবনা’। পাশাপাশি, এমন ‘স্পর্শকাতর বিষয়ে’ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার সংসদের হাতে তুলে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। মোদি সরকারের বক্তব্য— ‘সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের কোনও রায় সঠিক পদক্ষেপ হবে না’!

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় কেন্দ্রের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কখনও বলেছেন, ‘‘সমকামিতা শুধু শহুরে বিষয়, এমন কোনও পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে।’’ তিনি  বলেছেন, ‘‘সমকামী সম্পর্কগুলি কেবল শারীরিক নয়, মানসিক, স্থিতিশীল সম্পর্কও।’ এমনকি, সমলিঙ্গে বিয়ে আইনি স্বীকৃতি না পেলে সমকামী দম্পতির সামাজিক পরিচয় কী হবে, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। পাশাপাশি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আদালত আইন তৈরি করতে পারে না। কিন্তু আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারে। এতএব সমলিঙ্গ বিবাহকে আইন করার বিষয়ে সরকারকেই অগ্রসর হতে হবে।