দিল্লি, ১৪ সেপ্টেম্বর– মোদির বিশেষ অধিবেশন ডাকায় জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল, এবছর ভোট এগিয়ে আনতে চায় মোদি সরকার। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সেরকম কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। গেরুয়া শিবিরও বার-বার অস্বীকার করেছে বিরোধীদের এই অভিযোগকে। কিন্তু এবছর না হলেও আগামী বছর লোকসভা ভোট নিয়ে শোনা গেল সেই একই বার্তা। আগামী বছর নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগে হতে পারে লোকসভা ভোট। এমনটাই শীর্ষ সূত্রের খবর। সেই অনুযায়ী, এপ্রিলে নয়, মার্চ মাসেই শুরু হতে পারে লোকসভার ভোটপর্ব। শেষ হবে এপ্রিলের গোড়ায়। কিন্তু মার্চেরও আগে নির্বাচন এগোনোর কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানা গিয়েছে।
সূত্র বলছে, নির্ধারিত সময়ের মাসখানেক আগেই ভোট করে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বিষয়কে কারণ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। রাজনৈতিক শিবির কিছুটা রসিকতার ছলে একটি জনপ্রিয় হিন্দি ছবির সংলাপ অনুকরণ করে বলছে, ‘লোহা গরম থাকতে থাকতেই হাতুড়ি মারতে চাইছেন শাসক দলের নেতৃত্ব।’ কিন্তু এত আগেও ‘হাতুড়ি’টি মারতে চাইছেন না, যাতে মনে হতে পারে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ভয়ে বিজেপি সাত তাড়াতাড়ি নির্বাচন করে নিতে চাইছে। জি২০-র সাফল্যকে সামনে রেখে যে ভাবে আজ থেকেই আসর গরম করতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব, তাতে এটা স্পষ্ট, ভারত মণ্ডপমে তৈরি করা নরেন্দ্র মোদির ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তিকে ভোট প্রচারে যতটা সম্ভব ব্যবহার করবে দল। এবং তা গোটা দেশ জুড়েই।
প্রথম যে কারণটি ভোট এগোনোর পেছনে আছে তা হল, রামমন্দির। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তিকে দেশে বিপণনের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় হিসাব রয়েছে অযোধ্যায় রামমন্দিরকে ঘিরে। আগামী জানুয়ারিতেই রামমন্দির উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছিল মোদি সরকার। দিল্লিতে যে সময় জি২০-র রাষ্ট্রপ্রধানেরা বৈঠকে বসেছিলেন, সে সময় রামমন্দিরের উদ্বোধনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ স্থির করতে অযোধ্যায় বৈঠক করে রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট। সূত্রের মতে, ওই বৈঠকই ঠিক হয়, আগামী ২১-২৪ জানুয়ারির মধ্যে কোনও একটি শুভ দিনে ওই মন্দিরের উদ্বোধন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে মোদিকে । তবে রামলালার মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়ে যাবে ১৪ জানুয়ারি থেকেই। একটি সূত্রের মতে, সম্ভবত ২২ জানুয়ারি দিনটিকেই চূড়ান্ত করার কথা ভাবা হয়েছে। ফলে জানুয়ারি মাসে রামমন্দির নির্মাণকে নিয়ে যে হাওয়া তৈরি হবে, তাকে ঘিরে গোটা ফেব্রুয়ারি মাস প্রচার করবার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। এত দিন যে রামমন্দির নির্মাণের জিগির তুলে ভোট চেয়েছে বিজেপি, সেই মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে সেই উন্মাদনা কতটা থাকবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। আর তাই জানুয়ারির পরে বেশি সময় নষ্ট করতে চাইছে না তারা।
বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে জি২০ দেখছেন। এ বারের মতো ‘সফল সম্মেলন’ আগে হয়নি। এ কথাও তিনি জানিয়েছেন, উপস্থিত বিশ্বনেতারা ভারতের চন্দ্রযান নিয়ে ‘টেবিল চাপড়ে’ আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
এই ‘আনন্দ এবং টেবিল চাপড়ানো’ কে কাজে লাগিয়ে লোকসভা ভোটের আয়োজন ও প্রচার শুরু করে দিতে চাইছে বিজেপি। আর শুধু জি২০-ই নয়। চেষ্টা চলছে জানুয়ারি মাসেই আরও একটি মেগা আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের চতুর্দেশীয় অক্ষ বা ‘কোয়াড’-এর শীর্ষ সম্মেলন এ বার হবে ভারতে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনই এই তিন রাষ্ট্রনেতাকে প্রধান অতিথি করে আসর গরম করা হবে। সেই হাওয়াতেই এক দিন আগে, অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি কোয়াড সম্মেলন করা হবে। জি২০-র মতো দিল্লিতেই যে কোয়াড হবে, এমনটা না-ও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী দিল্লির বাইরেই নিয়ে যেতে পারেন এই সম্মেলনকে। কিন্তু সূত্রের খবর, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সদ্য ভারত সফর করে ফিরলেন। এখনই তাঁর পরবর্তী সময়ের তারিখ পাওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া ২৬ জানুয়ারি ‘অস্ট্রেলিয়া ডে’-ও বটে। সে দিন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ভারতে থাকা সম্ভব নয়। তবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে না হোক, তার কাছাকাছি সময়েই কোয়াড করা হবে এবং জি২০-র পাশাপাশি কোয়াডের রেশও মার্চ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী মাসেই, অর্থাৎ অক্টোবরেই আরও একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন রয়েছে নয়াদিল্লিতে। জি২০ ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির স্পিকারদের একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হবে সংসদের নতুন ভবনে। তাঁদের সামনে ভারতের সাংস্কৃতিক বিবিধতা এবং সামরিক পরাক্রম তুলে ধরা হবে বলে জানা গিয়েছে। সেখানেও মোদি সরকারের পরাক্রমের বিষয়টিতে আন্তর্জাতিক সিলমোহর ফেলা হবে, যা পরবর্তীতে ভোট প্রচারে কাজে আসবে বলেই মনে করছে বিজেপি।