আহমেদাবাদ , ২০ ফেব্রুয়ারি — গত ৩০ অক্টোবর গুজরাটের মোরবি সেতু দুর্ঘটনার ভয়াবহ ছবি এখনও সবার স্মৃতিতে টাটকা। মোরবিতে ঝুলন্ত সেতু ছিঁড়ে পড়ে নদীতে, মৃত্যু হয় ১৩৫ জনের। ওই ঘটনার পরই দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারের তরফে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। দুর্ঘটনার চার মাস পর সিটের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে, মোরবি সেতুর অর্ধেকেরও বেশি লোহার তারে মরচে পড়ে গেছিল। বেশ কিছু পুরনো তারের সঙ্গে নতুন তার ঝালাই করে জুড়ে দেওয়া হয়, ফলে সেতুর ভারসাম্য নড়বড়ে হয়ে যায়। দুর্ঘটনার দিন প্রচুর সংখ্যক মানুষ সেতুর উপরে থাকায়, ভার সামলাতে না পারায় সেতু ছিঁড়ে যায়, নদীতে পড়ে যান কয়েকশো মানুষ।
সিটের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গুজরাত সরকারের নির্দেশে তৈরি তদন্তকারী দল সেতু বিপর্যয়ের জন্য মূলত দায়ী করছে বরাত পাওয়া সংস্থাকে।ওরেভা গ্রুপের অজন্তা ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড সংস্থা গুজরাটের মাচ্চু নদীর উপরে অবস্থিত মোরবি সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। সিটের তদন্তে সংস্থার বিরুদ্ধে রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে সেতু সারাইয়ের ক্ষেত্রে একাধিক গাফিলতি খুঁজে পাওয়া গেছে। সিটের তরফে জানানো হয়েছে, সেতুর প্রধান দুটি তার ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ শাসকদের তৈরি। এরমধ্যে একটি মোটা তারে সম্পূর্ণ মরচে পড়ে গেছিল এবং অন্যান্য বেশিরভাগ তার দুর্ঘটনার আগে থেকেই ছেঁড়া ছিল। দুর্ঘটনার দিনও একটি প্রধান তার ছিঁড়ে যায়, ফলে সেতুর একটা বড় অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যায়।
সিটের রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, প্রত্যেকটি প্রধান কেবল সাতটি স্টিলের তার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই সাতটি তার তৈরির জন্য মোট ৪৯টি তার ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ৪৯টি তারের মধ্যে ২২টিতে জং ধরা ছিল, ২৭টি তার দুর্ঘটনার সময় ছিঁড়ে যায়। সেতুর সংস্কারের সময়ও পুরনো স্টিলের রড ঝালাই করে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছিল। এরফলে এই সাসপেন্ডারগুলির ভরসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। সিটের তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরনের সেতুতে সিঙ্গেল রড সাসপেন্ডার ব্যবহার করা উচিত ছিল, যা মোরবি সেতুতে ছিল না।
১৪৩ বছরের পুরনো সেতুটি সাত মাস ধরে সংস্কারের পরে সদ্য খোলা হয়েছিল গত নভেম্বরে। তার পরেই ঘটে যায় মর্মান্তিক বিপর্যয়। শুরু হয় মৃত্যু মিছিল। রিপোর্ট বলছে, ভেঙে পড়ার সময় সেতুটিতে প্রায় ৩০০ লোক ছিলেন, যা সেতুর বহন ক্ষমতার চেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে মোরবি পুলিশ ওরেভা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়সুখ প্যাটেল-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।