দিল্লি, ১০ নভেম্বর – দীপাবলির আগেই ভয়ঙ্কর দূষণে ধুঁকছে রাজধানী দিল্লি৷ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই সাংবাদিক বৈঠক করেন৷ তবে দূষণ থেকে সাময়িক স্বস্তি মিলেছে৷ এমনকি প্রয়োজনে দিল্লি সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামাতেও তাঁরা প্রস্ত্তত৷ দিল্লি প্রশাসনের আধিকারিক বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যদি সাহায্য করে, তা হলে দিল্লি সরকার কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামাতে যাবতীয় খরচ বহন করতে প্রস্তুত৷ সব ঠিক থাকলে আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামানোর ব্যবস্থা করা হবে৷’’ ওই আধিকারিক জানান, কানপুর আইআইটির পরামর্শ মতো প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিষয়টি নিয়ে দিল্লি সরকারের অবস্থান সুপ্রিম কোর্টে জানাবেন৷ এরই মধ্যে দিল্লি-নয়ডার বেশ কিছু এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতের দিকে প্রবল বৃষ্টি হয়৷
দিল্লির দূষণের মাপকাঠি কিছু এলাকায় নিয়ন্ত্রণে এলেও পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক৷ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টায় গড় AQI ছিল ৪৩৭৷ বাতাসের গুণগত মানের দিক থেকে যা অত্যন্ত খারাপ৷ দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৈঠকে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, নানা রকমের অবহেলার কারণে দূষণের পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে৷ এর পরে তিনি জানান, আগামী দিনে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য মন্ত্রীরা মাঠে নেমে কাজ করবেন৷ উত্তর ও উত্তর-পূর্বের জেলাগুলির দায়িত্বে থাকবেন গোপাল রাই নিজে৷ মন্ত্রী কৈলাস গেহলট দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলিকে দেখবেন৷ আর এক মন্ত্রী অতিশী মার্লেনা থাকবেন পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের জেলাগুলির দায়িত্বে৷ মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজকে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ দিল্লি ও নয়াদিল্লির দায়িত্ব৷ এ ছাড়া, মন্ত্রী ইমরান হোসেন ও রাজ কুমার আনন্দের দায়িত্বে থাকবে বাকি এলাকাগুলি৷ পাশাপাশি নির্মাণস্থল, বাস ডিপো-সহ বাকি জায়গাগুলি থেকে যাতে আগামী দিনে দূষণ না বাডে়, সে দিকেও নজর রাখবেন মন্ত্রীরা৷
দিল্লি ও তার সংলগ্ন রাজ্যগুলির দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টও৷ নাড়া পোড়ানোকে দায়ী করে তা কমাতে দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়৷
এদিকে দিল্লির কিছু জায়গায় এককিউআই-য়ের স্তর ৪০০ থেকে নেমে ১০০ হয়েছে৷ আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দিল্লির কানঝাওয়ালা, মুন্ডকা, জাফররু, নাজফগড়, নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডায় বৃষ্টি হয়েছে৷ বাহাদুরগড়, গুরুগ্রাম, মানেসহ-এর বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে৷ পাশাপাশি হরিয়ানার রোহতম, খারখোদা, মাত্তানহেল, ঝাজ্জারস ফারুখনগর, কোসলি সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে৷ আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির পাশাপাশি হরিয়ানার বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে৷ গোহানা, গান্নাউর, মেহম, সোনাপাত, খারখোদা, চরখি দাদরি, মাত্তানহেল, ঝাজ্জার, ফারুখনগর, কোসলি, সোহনা, রেওয়ারি বাওয়ালে অল্প পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে৷ রাজস্থানে ভিওয়াডি়তেও বৃষ্টি হতে পারে৷ শুক্রবার দিল্লির আকাশ সাধারণত মেঘলা থাকবে ও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর৷
কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলে ২১ নভেম্বরের মধ্যে দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টির প্রথম ধাপের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ দিল্লির পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই আইআইটি কানপুরের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ পরে তিনি জানিয়েছেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার দিল্লিতে বায়ু দূষণ রোধে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টি করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে৷
দিল্লি দূষণ নিয়ে কেজরিওয়াল সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে টানাপোডে়ন অব্যাহত৷ শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্রের তরফে বলা হয়েছে, দিল্লির দূষণ মোকাবিলায় ‘স্মগ টাওয়ার’ কোনও সমাধান নয়৷ দূষণের অন্যতম কারণ পঞ্জাবের কৃষকদের ফসলের গোড়া পোড়ানো৷ আগামী দিনে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লি দূষণ আটকাতে আর ‘স্মগ টাওয়ার’ তৈরি করবে না৷