নিজস্ব প্রতিনিধি – কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি এস বি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুনর্বিবেচনার আবেদন বা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে। গত বছরের ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের (স্যাট) একটি রায়কে খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে ছিল ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অধিকার। রাজ্য সরকার এই রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করে। এদিন হাইকোর্ট সেই পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এদিনের রায়ের পর রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের পক্ষে এই মামলায় চূড়ান্ত রায় দানে আর বাধা রইল না। মনে করা হচ্ছে যে, চলতি মাসেই চূড়ান্ত রায় দিতে পারে স্যাট, যদিও হাইকোর্ট তাদের রায়ে স্যাটকে নির্দেশ দিয়েছে অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে আগামী দু’মাসে বিষয়টা নিটিয়ে ফেলতে।
কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ সহ রাজ্য সরকারি কর্মচরীদের সংগঠন ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের হারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়ার দাবিতে স্যাটে ম্মলা দায়ের করে। কিন্তু স্যাট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানায়, সরকারের ইচ্ছে অনুযায়ী ডিএ দেওয়া হবে, কারণ এটা এক ধরনের অনুদান। এটা জানিয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির পক্ষে আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি। স্যাট এই মামলা খারিজ করে দেওয়ার পর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কলকাতা হাইকোর্টের দরাস্থ হয়। গত বছর ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট সেই মামলায় জানিয়ে দেয় যে, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের অধিকার। কিন্তু কী হারে ডিএ দেওয়া হবে এবং বছরে ক’বার দেওয়া হবে, সেসব মীমাংসার ভর হাইকোর্ট ছেড়ে দেয় স্যাটের উপর। স্যাট যখন এই মামলার শুনানি চলছে, তখন রাজ্য সরকার ফের হাইকোর্টে একটি রিভিউ পিটিশন ফাইল করে। রাজ্য সরকারের পক্ষে আবেদন করা হয় ‘ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অধিকার’ বলে হাইকোর্টের রায় যেন আদালত পুনর্বিবেচনা করে। রাজ্য সরকারের তরফে স্যাটকেও জানানো হয়, যতদিন এই রায় পুনর্বিবেচনা মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে হাইকোর্টে, ততদিন স্যাট যেন এই মামলার শুনানি স্থগিত রাখে। সেই মতো স্যাট এই মামলার শুনানি নিয়ে আর এগোয়নি। এদিন রাজ্য সরকারের রায় পুনর্বিবেচনার সেই আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়ে বলেছে, মামলা চলাকালীন রাজ্য সরকার আদালতে তাদের বক্তব্য পেশের যথেষ্ট সুযোগ ও সময় পেয়েছে। মামলাটা এখন স্যাটের কাছে ফেরত পাঠাল হাইকোর্ট।
রাজ্য সরকারের রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি ডিএ মামলার অবিলম্বে নিষ্পত্তি আশা করছেন। কনফেডারেশনের তরফে সুবীর রাহা বলেন, আমরা খুশি কারণ হাইকোর্টের রায়ের পর রাজ্য সরকারি কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত হল। ২০০৯ সালে ‘রিভিশন অব পে অ্যান্ড অ্যালাউন্সেস আইন’ (রোপ) ২০১৯ বলবৎ হওয়ার পর রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ পাওয়া আইন অধিকার হয়ে গেছে বলে আগের রায়ে জানিয়েছিল হাইকোর্ট। ডিএ দাবি আদায়ের জন্য মামলা করেছিল বিজেপির সংগঠনও। বিজেপির দেবাশিস শীল বলেছেন, এই রায়ে সরকারি কর্মীদের জয় হল। হাইকোর্টের এদিনের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন ফেডারেশনও। ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তীও হাইকোর্টের এদিনের রায়কে কর্মীদের জয় হিসেবেই দেখছেন।