নিজস্ব প্রতিনিধি — এক নির্দেশেই রাতারাতি দুই সিপি এবং দুই এসপি’কে বদল করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনে অভিযােগ জানিয়েছিলেন। পত্রাঘাত করেছিলেন এই বলে, বিজেপি’র কথায় কমিশন চলছে। তাঁর পত্রাঘাতের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই এবার প্রত্যুত্তর এল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে। তিন পাতার এই চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় চাইলে যে কোনও অফিসারকে কমিশন বদল করতে পারে। সেই সাংবিধানিক অধিকার তাদের রয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের বিরুদ্ধে যে পক্ষপাতিত্বের অভিযােগ তুলেছেন, তা তারা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। শনিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক চন্দ্রভূষণ কুমার পাল্টা চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধি আইনের ২৮এ ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, রাজ্য সরকার যে অফিসারকে নির্বাচন সামলাবার দায়িত্ব দেবে নির্বাচন কমিশন সেই আধিকারিককে রিপাের্ট করতে হবে কমিশনকে। কমিশন চাইলে তাঁকে বদলি করেও দিতে পারে। কমিশনের হাতে যে বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে, সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা তারা প্রয়ােগ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের অভিযােগ দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করেছেন মুখ্যনির্বাচনী আধিকারিক। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ কলকাতায় দুদিন ধরে রাজ্যের নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে করা সম্ভব তা পর্যালােচনা করে কমিশন। সেই সময় মুখ্যসচিব, ডিজি সহ প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলােচনা করা হয়। খতিয়ে দেখা হয় বিরােধী দলগুলির আনা অভিযােগ। ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার তিনি নিজে কলকাতায় এসে পুরাে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। সেই সঙ্গে আনা হয় বিশেষ পর্যবেক্ষকও। এধরনের পর্যালােচনা বৈঠক সারা দেশজুড়ে চলছে। পশ্চিমবঙ্গে এর ব্যতিক্রম নয়। ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ঝাড়খন্ডের মতাে রাজ্যেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এধরনের একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে, যে অভিযােগ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসছে তা সঠিক নয়। শুধুমাত্র বাংলাকে নিশানা করা হয়েছে এমনটা নয়। ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের রিপাের্টের ওপর সেই সঙ্গে পুলিশ পর্যবেক্ষক যারা রয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে চার আধিকারিককে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয় যতক্ষণ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি এগিয়ে না আসে। যদিও সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে নিরপেক্ষ ভােট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। এখানেই থেমে থাকেনি কমিশন। মমতার তােলা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এধরনের অভিযােগের উত্তর দেওয়াটা রীতিমত দুর্ভাগ্যজনক। নিজেদের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযােগ্যতা এভাবে প্রমাণ করা নির্বাচন কমিশনের কাছে রীতিমত অসম্মানজনক বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযােগ করেছিলেন, মাত্র কয়েকদিন হয়েছে একজন আধিকারিককে পলিশ সুপার করা হয়েছিল। তাকেও সরিয়ে দিয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সেইসব এলাকা সম্বন্ধে বহিত নন। ফলে, নির্বাচন কমিশন যে ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা সঠিক নয়। বিভিন্ন জনসভাতেও এই নিয়ে সুর চড়িয়েছেন মমতা। কিন্তু মমতার লিখিত অভিযােগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশন তার প্রত্যুত্তর দিয়ে বুঝিয়ে দিল, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা আরও কঠোর এবং কঠিন হতে পারে।