ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্রমশ জোরালো হচ্ছে অন্তর্ঘাত তত্ত্ব, ঘটনাস্থলে সিবিআই

কলকাতা , ৬ মে – ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্রমশ জোরালো হচ্ছে অন্তর্ঘাত তত্ত্ব। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে অন্যান্য তত্ত্বের পাশাপাশি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে  অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেছেন খুরদার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার রিঙ্কেশ রায়।  সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখতে এ বার তদন্তভার হাতে নিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।  মঙ্গলবার সিবিআইয়ের ১০ জনের একটি দল  ঘটনাস্থলে  পৌঁছয় । তাঁরা গোটা  এলাকা ঘুরে দেখেন এবং দুঘটনা  সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি সংগ্রহ শুরু করেন। দুর্ঘটনার সময় কর্তব্যরত রেলকর্মীদের বয়ানও নেবেন সিবিআই আধিকারিকরা ।  

ওড়িশার বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় সরকারের কাছে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করছে রেল বোর্ড। এমনটাই জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ওই দুর্ঘটনার পর এফআইআর দায়ের করেছে জিআরপি। তদন্ত চালাচ্ছে রেল সুরক্ষা কমিশনও। রেলের হিসাব অনুযায়ী ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু সংখ্যা ২৮৮ , যদিও ওড়িশা সরকারের হিসাব অনুযায়ী দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে  ২৭৫ জনের।   

গত কয়েকদিনে দুঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে ক্রমশই জোরালো হতে থাকে অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব । ট্রেন দুর্ঘটনায় ‘অন্তর্ঘাত’ হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খুরদার ডিআরএম রিঙ্কেশ রায়। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী , বাইরে থেকে কোনও কিছু পরিবর্তন না করে থাকলে সিগন্যাল ব্যবস্থায় ত্রুটি হতে পারে না।স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিআরএম রিঙ্কেশ রায় বলেন, “মেন লাইনে সিগনাল সবুজ ছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে তবেই সবুজ সংকেত মেলে। সামনের লাইন ১০০ শতাংশ ফাঁকা না থাকলে সিগনাল প্রযুক্তিগতভাবে সবুজ হতেই পারে না। কোনও একটি ছোটখাটো ত্রুটির কারণেও সিগনাল লাল হয়ে থাকে। যদি না কেউ নিজে থেকে সব জেনে তা সবুজ করে দেন। এ ক্ষেত্রে, কেউ ইচ্ছা করে সিগনাল না দিলে তা সবুজ হতেই পারে না।”
২ জুন ওড়িশার বাহানাগা বাজারের কাছে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রাথমিক তদন্তের পর রেলের তরফ থেকে সিগনালে ত্রুটির কথা বলা হয় । কিন্তু পরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ইঙ্গিত দেন এই দুর্ঘটনার পিছনে মানুষের হাত থাকতে পারে। পৃথক ভাবে সোমবারই করমণ্ডল দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন রেল সেফটি কমিশনার এএম চৌধুরী।সোমবার খড়্গপুরে তিনি জানান, ওই দুর্ঘটনার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব চলছে। ট্রেনের কর্মী এবং চালক মিলিয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি থাকলে তাও গ্রহণ করা হবে। তবে ওই তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে বলে তিনি জানান। 
রেলের ইন্টারলকিং সিস্টেমে কোনও কারসাজির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, বালেশ্বরে তিনটি ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা যাত্রীসুরক্ষা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অ্যান্টি-কলিশন সিস্টেম না থাকার কারণেই  ভয়ংকর রূপ নিয়েছে দুর্ঘটনা। এবার একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলে প্রযুক্তগত উন্নতির জন্য বাজেটে একটি মোটা অঙ্কের অর্থ রবাদ্দ করা হয় যার আওতায় পড়ে বালেশ্বরও। কিন্তু গত তিন বছরে প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য কোনও অর্থ ব্যয় করা হয়নি।