ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি ইজরায়েলে, আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর তদ্বির দিল্লির 

দিল্লি, ৯ অক্টোবর – প্যালেস্তেনীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামাসের রকেট হামলার পর থেকে শুরু হয়েছে যুদ্ধ।  যার জেরে তেল আভিভ, জেরুজালেম-সহ ইজ়রায়েলের বিভিন্ন শহরে আটকে পড়েছেন বহু  ভারতীয় নাগরিক।  তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী,  পর্যটক , কেউ বা আবার পড়ুয়া। এঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা করে যেভাবে সে দেশ থেকে  ভারতীয়দের উদ্ধার করা হয়েছিল,  এ বারেও সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ‘উদ্ধার অভিযান’ শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে। কূটনৈতিক স্তরে ইজরায়েল এবং স্বশাসিত প্যালেস্তেনীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বিদেশমন্ত্রক।

এদিকে জেরুজালেম ভ্রমণে গিয়ে বেথলেহেমে আটকে পড়েন ২৭ জন মেঘালয়ের নাগরিক।  ভারতীয় দূতাবাসের তরফে তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।   এই ২৭ জন ভারতীয় নিরাপদে মিশরে পৌঁছেছেন।  মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এক্স হ্যান্ডলে লেখেন , ‘আমাদের ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের নিরলস প্রচেষ্টায় মেঘালয় থেকে আমাদের ২৭ জন নাগরিক নিরাপদে সীমান্ত অতিক্রম করে মিশরে পৌঁছেছে। ‘

দূতাবাস সূত্র পিটিআই-কে জানিয়েছে , তারা সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ২৪ ঘন্টা সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে।  আইটি কর্মী, ব্যবসায়ী, এবং বহু ভারতীয় পরিষেবাকারী ইজরায়েলে বসবাস করেন।  বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে বা আবাসনে রয়েছে।  তারা হোয়াটসআপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন।  জেরুসালেমের হেব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারি বিভাগের এক ভারতীয় পড়ুয়া পিটিআইকে বলেন, ‘‘ইহুদি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সিমহাত টোরার জন্য শনিবার ছুটি ছিল। সে দিন এমন হামলা সকলের কাছে অপ্রত্যাশিত। তার পর থেকেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরোতে বারণ করা হয়েছে। আমাদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই বাঙ্কারে কাটছে।’’ 


 প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকালে হামাসের রকেট হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত দু’পক্ষের যুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার সেনা এবং অসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। 

গাজা ভূখণ্ড হামাসের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বর্তমান  পরিস্থিতিতে রাজধানী তেল আভিভের পাশাপাশি, গাজা লাগোয়া দক্ষিণ ইজরায়েলের ডেরট, কফর আজ়া, বেরি, রেইম, বেরশেভা, ওফাকিনের মতো শহরগুলিই সবচেয়ে বেশি সঙ্কটের মুখে। রকেট হামলার পাশাপাশি, গাজা সীমান্তবর্তী ইজ়রায়েলের কয়েকটি শহরে অনুপ্রবেশকারী হামাস বাহিনীর সঙ্গে সেনার মুখোমুখি লড়াই চলছে।

দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইজরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশের সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের দূতাবাসের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্ক থাকার এবং প্রোটোকল মানার অনুরোধ রেখেছে।  

 অন্য দিকে এই যুদ্ধকে ঘিরে বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি অব্যাহত।  বিজেপির সমালোচনার মুখে পড়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে কংগ্রেস।  ইজরায়েলবাসীর উপর আক্রমণ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  এদিন  বিজেপির সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র অনিল বালুনি তাঁর এক্স হ্যান্ডল-এ একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে শুধু কংগ্রেস নয়, তিনি বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-কেও কটাক্ষ করেন। ছবিটিতে রয়েছেন সোনিয়া , রাহুল , প্রিয়ঙ্কা গান্ধি  বঢরা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, কে চন্দ্রশেখর রাও, অখিলেশ সিংহ যাদব প্রমুখ। উপরে লেখা রয়েছে, ‘ইজ়রায়েলে সন্ত্রাসবাদী হামলায় এঁরা নীরব।’ ছবির নীচে লেখা, ‘এঁরা নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে কথা বলেই চলেন।’ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে , ‘নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক’ বলতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর কথাই এখানে বোঝানো হয়েছে।

সোমবার কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ একটি বিবৃতিতে লেখেন , ‘‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ইজরায়েলবাসীর উপর এই বর্বরোচিত হামলার নিন্দা করছে। কংগ্রেস  বিশ্বাস করে প্যালেস্টাইনবাসীর আত্মসম্মান, সমমর্যাদা, আত্মগর্ব অর্জনের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাকে মেটাতে পারে শান্তিপূর্ণ আলোচনা। সে ক্ষেত্রে ইজরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাজনিত স্বার্থকে মান্যতা দিতে হবে। হিংসা কোনও কিছুরই সমাধান আনতে পারে না। অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’

এই পরিস্থিতিতে সোমবার  সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষি লেখি  জানান, প্রধানমন্ত্রীর অফিস পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে। বহু ভারতীয় সে দেশে আটকে রয়েছেন এবং রাতভর তিনি ফোনে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মাঠে নেমে পড়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অফিস সব কিছুর উপর নজর রাখছে। এর আগেও অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের ছাত্ররা আটকে পড়েছিলেন। অপারেশন গঙ্গা হোক বা বন্দে ভারত, আমরা তাঁদের ফিরিয়ে এনেছি।’’