বক্সার, ১২ অক্টোবর – ফের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল বিহারের বক্সার জেলার রঘুনাথপুর রেল স্টেশনের কাছে। বুধবার রাতে ওই রেল স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয় দিল্লি থেকে কামাক্ষ্যাগামী নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস। এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত কমপক্ষে ৭০ জন। এদের মধ্যে ৩০ জন যাত্রীর অবস্থা সঙ্কটজনক। মঙ্গলবার রাত থেকেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। তাদের উদ্ধার করে আশেপাশের স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত যারা, তাদের পটনার এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়ের উপরে নজর রাখছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেল দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে একাধিক ট্রেন। বিভিন্ন ট্রেনের গতিপথও পরিবর্তন করা হয়েছে।
ফের করমণ্ডলের স্মৃতি উস্কে দিল বিহারের ট্রেন দুর্ঘটনা। দিল্লির আনন্দ বিহার থেকে অসমের কামাক্ষ্যায় যাচ্ছিল নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস। বিহারের রঘুনাথপুর রেলওয়ে স্টেশন পার করার পরই, রাত ৯টা ৫৩ মিনিট নাগাদ হঠাৎ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ট্রেনটি। দুটি এসি ৩ টায়ার কোচ একে অপরের উপরে উঠে যায়। কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের জমিতে পড়ে যায়।লাইনচ্য়ুত হয়ে যায় ট্রেনটি। একটি কামরার উপরে উঠে যায় আরেকটি কামরা। ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর যে ছবি দেখা গিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে সেই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় বিহারের বক্সারে। দুর্ঘটনার জেরে গোটা ট্রেনটিই লাইনচ্যুত হয়ে যায়। একটি কামরাও অক্ষত নেই। কিছু কামরা গড়িয়ে পড়েছে রেললাইনের পাশের ট্র্যাকে । আবার কয়েকটি কামরা কোথাও বেঁকে, কোথাও হেলে দাঁড়িয়ে আছে আড়াআড়ি অবস্থায়। ট্রেনের বগির নীচ থেকে চাকা ভেঙে পাশে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। উপড়ে যায় রেললাইন।
দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন পূর্ব-মধ্য রেলওয়ের শীর্ষ আধিকারিকরা। রাতের অন্ধকারে প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকাজ শুরু করতে সমস্যা হয়। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় এনডিআরএফের দল। সমস্ত কামরা থেকে সুরক্ষিতভাবে যাত্রীদের উদ্ধার করে আনা হয়। গুরুতর আহত যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় পাটনার এইমস হাসপাতালে। কী কারণে এই দুর্ঘটনা তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে রেল। তবে রেলসূত্রে জানা যায়, অল্পের জন্য ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটতে পারত। ট্রেনের ২১টি কামরাই লাইনচ্যুত হয়ে যায়। যেভাবে কামরাগুলি উল্টে পাল্টে যায়, তাতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।চারটি কামরা সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলি হল- এম ২ , বি ৭, বি ৪ ও বি ৫ ।
ঘটনাস্থল থেকে বাকি যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ৬টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি একটি রেকও খালি করে দেওয়া হয়। রাত দুটো নাগাদ কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানান উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্য়বস্থা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ দিন ভোরেই রেলের তরফে একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে, দুর্ঘটনার কারণে একাধিক ট্রেন বাতিল ও গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবারই ২টি ট্রেন বাতিল করা হয় এবং ২১টি ট্রেনের গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। আপ ও ডাউন লাইন মিলিয়ে আরও কিছু ট্রেন বাতিল ও গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়া হল। যে ট্রেনগুলির গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে হাওড়াগামী পূর্বাগামী এক্সপ্রেস, শ্রমজীবী এক্সপ্রেস, তেজস রাজধানী এক্সপ্রেস, ফারাক্কা এক্সপ্রেস সহ একাধিক ট্রেন।