দিল্লি, ২০ ডিসেম্বর – দেশের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি বিতর্ক আরও বাড়িয়ে তুলল রাজধানীতে। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার দাবি, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে ‘অশ্রদ্ধা’ করেননি। বুধবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। মমতা এদিন বলেন, রাহুল গান্ধি ভিডিও না করলে কেউ হয়তো জানতেও পারতেন না।
বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধনখড়কে নকল করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে যা বলার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন বলবেন।’ দফার তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তখন মমতা বলেন, ” এটি খুবই হালকা চালে করা। আমরা কাউকে অসম্মান করি না। অসম্মান করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এখানে অশ্রদ্ধার কোনও প্রশ্নই নেই। এই ঘটনাকে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখা উচিত। সহজভাবে নেওয়া উচিত। রাহুল গান্ধি মোবাইলে ভিডিওগ্রাফি না করলে হয়তো বিষয়টি কেউ জানতেও পারত না।” ফের সাংবাদিকদের তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে কি আপনি এই কাজকে সমর্থন করছেন ? সেই প্রশ্নের কোন জবাব দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ”আজকের বাংলার বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে আমি উত্তর দেব, এই নিয়ে কিছু বলব না।”
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে নকল করেছিলেন তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। অন্যদিকে, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়কে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ধনখড় জানান, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন মোদি।
মঙ্গলবার সংসদ চত্ত্বরে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনখড়কে নকল করে দেখান তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই মিমিক্রি দেখতে সেখানে জড়ো হয়ে যান রাহুল গান্ধি-সহ বিরোধী সাংসদরা। কল্যাণের এই আচরণ তাঁরা একদিকে যেমন উপভোগ করেন, তেমনি কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিকে মোবাইল ফোনে কল্যাণের ভিডিও তুলতে দেখা যায়।
এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুণ্ন ধনখড় একে ব্যক্তিগত আক্রমণ বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর এ বিষয়ে কথা হয়েছে লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ধনখড়। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, “তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি ২০ বছর ধরে এই ধরনের অপমান সহ্য করেছেন । তবে উপরাষ্ট্রপতির মতো একটি সাংবিধানিক পদ এবং তা সংসদের সঙ্গে জড়িত। একে খুব দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে আমি জানিয়েছি, কিছু মানুষের এই ধরণের কাজকর্ম আমাকে আমার কর্তব্য থেকে বিরত রাখতে পারবে না। আমি সংবিধানের নিয়মকানুনকে শ্রদ্ধা করি।সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রতি আমি দায়বদ্ধ। এই ধরণের অপমান আমাকে আমারপদ থেকে সরাতে পারবে না।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আচরণের সমালোচনা করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। তিনি লেখেন, “সংসদ চত্ত্বরে যেভাবে দেশের উপরাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করা হয়েছে তাতে আমি হতাশ। একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তাঁদের সেই মতামত প্রকাশে সম্মান রাখা উচিত। সাংবিধানিক রীতি সেটাই। আমরা এর জন্য গর্বিত। ভারতের নাগরিক এটাই আশা করে।”
বুধবার ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে দুঃখপ্রকাশ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখের যে একজন সাংসদ ভিডিও করার মাধ্যমে ওই অসম্মানজনক কাজ করেছেন। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি এই ঘটনা সমর্থন করবেন না।’’
যদিও বুধবার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কল্যাণ বলেন, “আমি কাউকে আঘাত করতে চাইনি, বা সেরকম কোন ইচ্ছেও আমার নেই। জগদীপ ধনখড়জির প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা একই পেশার সঙ্গে যুক্ত। তিনি আমাদের প্রাক্তন রাজ্যপাল, বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি। আমি শুধু এক ধরণে শিল্প উপস্থাপন করেছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও লোকসভায় দাঁড়িয়ে মিমিক্রি করেছিলেন। যা দেখাতেও পারি। কিন্তু বিষয়টিকে কখনওই গুরুত্ব দিইনি।”
এদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক্স হ্যান্ডেলে এক ভিডিও ক্যাপশনে মহুয়া মিত্র একটি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘মিমিক্রি একটি শিল্পকলা যা এই বিষয়ে সিদ্ধহস্তরা প্রায়ই দেখিয়ে থাকেন।’
…………………..