দিল্লি – রাফায়েল যুদ্ধ বিমান ক্রয় সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ফের বিপাকে পড়ল মােদি সরকার। বুধবার রাফায়েল মামলায় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপাের্টকে ‘গােপন তথ্য’ বা ‘ক্ল্যাসিফায়েড় ডকুমেন্টস’ হিসেবে তুলে ধরে এটাকে সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার কেন্দ্রের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। এদিন আদালত জানিয়েছে, রাফায়েল মামলায় তারা এই গােপন নথি যাচাই করে দেখবে। সুপ্রিম কোর্ট রাফায়েল বিমান ক্রয় সংক্রান্ত গোটা বিষয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে আগে নরেন্দ্র মােদি সরকারকে ক্লিনচিট দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের ভিত্তি ছিল সরকারের দেওয়া কিছু ‘অসম্পূর্ণ এবং ভুল তথ্য’ বলে অভিযােগ জানিয়েছিল বিরােধীরা। এরই ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আগের রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিল বিরােধীরা পুনর্বিবেচনার যে আবেদন দায়ের করা হয়েছে তার ভিত্তি হল ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত সরকারের গােপন তথ্য যেখানে রাফায়েল চুক্তি বিষয়ে বহু কথার সাথে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে যে রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কিনতে গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রকের বিশেষ কমিটির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও ‘সমান্তরাল আলােচনা’ চালাচ্ছিল ফ্রান্সের কোম্পানি দাসোর সঙ্গে এবং তাতে আপত্তি জানিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এই পুরাে তথ্যটাই লিপিবদ্ধ করা আছে সরকারি ফাইলের নােটে। এই তথ্য হাতে আসে দ্য হিন্দু পত্রিকার এবং তারা ধারাবাহিকভাবে এই সরকারি নােটি প্রকাশ করে দেয়। হৈ চৈ পড়ে যায় সারা দেশে। নড়ে চড়ে বসে মােদি সরকার। তারা অভিযােগ করে দ্য হিন্দু পত্রিকার বিরুদ্ধে যে গােপন ফাইল তারা চুরি করেছে। যখন বিরােধীরা সুপ্রিম কোর্টের আগের রায়ের পুনর্মূল্যায়নের আবেদন জানায় আদালতে, তার উত্তরে ভারত সরকার যুক্তি দেখায় যে, গােপন তথ্য যেটা আবার চুরি হয়েছে সেটা কোনও মামলার সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে গৃহীত হতে পারে না। এদিন সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের এই যুক্তিকেই খারিজ করে দিয়ে তাদের নিজের পূর্বের রায়ের পুনর্বিবেচনার আর্জি শুনতে রাজি হয়েছে। এখানেই বিপাকে পড়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার ২০১৯ সালের লােকসভা ভােটের প্রথম পর্বের সূচনা। ঠিক এমন এক সময় সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা শুনতে রাজি হয়েছে যখন নরেন্দ্র মােদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন।
দ্য হিন্দু পত্রিকায় ধারাবাহিক যে ‘গােপন সরকার তথ্য’ প্রকাশিত হয়েছে তার বিষয় সম্পর্কে কিংবা সেই সরকারি তথ্যের সত্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তােলেনি কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্ণয়ে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ফের স্বীকৃতি পেল বলে মত রাজনৈতিক মহলের। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপাের্টকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে শুনানি করতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট- এটা সংবাদ মাধ্যমের বিশাল জয় হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। রায় পুনর্মূল্যায়নের মামলা করেছে যারা তাদের মধ্যে অন্যতম বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্তভূষণ যুক্তি দেখিয়েছে যদি কোনও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সঠিক হয় এবং কোনও গুরুত্বপূর্ণ মামলার অভিমুখ নির্দিষ্ট করতে সাহায্য করে তাহলে সেই গােপন তথ্য কীভাবে হাতে এল সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। দ্য হিন্দু পাবলিশিং গ্রুপের চেয়ারম্যান এম রাম বলেছেন এই গােপন তথ্যগুলি তার সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল জনস্বার্থে। দ্য হিন্দু কোথা থেকে এই গােপন তথ্য পেয়েছিল সেটা বলা যায় না কারণ সংবাদপত্র তাদের খবরের সূত্র জানাতে বাধ্য নয় এবং কেউ বাধ্য করতেও পারে না। প্রসঙ্গত ৩৬টি রাফায়েল ক্রয় করা হয়েছে অনেক বেশি দামে শুধু অনিল আম্বানির সংস্থাকে অবসেট কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেওয়ার স্বার্থে- এই সংক্রান্ত একটি মামলা গত ডিসেম্বর মাসে খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল সরকারের প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল এবং সন্দেহ করার কোনও অবকাশ নেই। দ্য হিন্দু পত্রিকা এই রায়ের পরেই ধারাবাহিক ভাবে রিপাের্ট প্রকাশ করে দাবি করেছিল রাফায়েল বেশি দামে কিনেছে ভারত কারণ ফ্রান্স এই সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য কোনও ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে রাজি হয়নি। লােকসভা নির্বাচনের আগে নিঃসন্দেহে রাফায়েল মামলায় এটা নতুন মােড় যা বিড়ম্বনায় ফেলবে নরেন্দ্র মােদি সরকারকে।