দূষণ রোধে ব্যর্থতা নিয়ে শীর্ষ আদালতের তোপ

দিল্লি, ২১ নভেম্বর – সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করছে  দিল্লি সরকার। দূষণ রোধে ব্যর্থতা নিয়ে আবারও শীর্ষ আদালতের তোপের মুখে পড়ল দিল্লি প্রশাসন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কৃষকদের ইচ্ছাকৃতভাবে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। দিল্লি ও পাঞ্জাব সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ, হরিয়ানাকে দেখে শিখতে হবে কীভাবে কৃষকদের সাহায্য করা যায়। উল্লেখ্য, নভেম্বরের শুরু থেকে দূষণের সমস্যায় জেরবার দিল্লি। সেই নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।

রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ চাষের জমিতে ফসলের গোড়া পোড়ানো, এমনটাই জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরা। খড়কুটো পোড়ানো রুখতে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, খড় পোড়া দূষণের জন্য শুধুমাত্র চাষিদের দায়ী করে তাদেরই দোষী বানানো হচ্ছে। কীভাবে এই ফসল পোড়ানো বন্ধ করা যাবে সে নিয়ে ভাবা উচিত।  
মঙ্গলবার দূষণ সংক্রান্ত মামলাগুলির একত্রে শুনানি শুরু হয় শীর্ষ আদালতে। দুই বিচারপতির বেঞ্চে তোপের মুখে পড়ে দিল্লি ও পাঞ্জাব সরকার। এই দুই আপ-শাসিত সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের বার্তা, “গত ছয় বছরের মধ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বর সবচেয়ে দূষিত দিল্লির বাতাস। কেন এই সমস্যা তা কারও অজানা নয় । সরকারেরই উচিত এই সমস্যার সমাধান করা।” 
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এসকে কৌল ও বিচারপতি এস ধুলিয়ার বেঞ্চ জানিয়েছে, চাষিদের উপর দোষ না চাপিয়ে কীভাবে আগাছা বা খড়কুটো নষ্ট করা যাবে সে উপায় বের করা উচিত পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সরকারের। কারণ এই পোড়া ধোঁয়াই দিল্লির বাতাসকে দূষিত করার অন্যতম কারণ।
কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল জানান, ফসলের গোড়া নষ্ট করা নিষিদ্ধ হলে কৃষিকাজ ধাক্কা খাবে। এ নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও নেই কেন্দ্রের।
 বিচারপতিরা বলেন, “কোনও কারণ আছে বলেই ফসল পোড়াচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু এখানে কোনও প্রতিনিধি নেই বলে তাঁদের কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি না। কৃষকদের কীভাবে বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায়, সেটা হরিয়ানার থেকে শেখা উচিত পাঞ্জাব সরকারের। দরিদ্র কৃষকদের সাহায্য করতে সবরকম সরঞ্জাম দেওয়া উচিত সরকারের।”

পাঞ্জাব সরকার দাবি করেছিল, ফসলের গোড়া তুলে ফেলার জন্য ১৮ হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই কাজে কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে হরিয়ানা সরকারের দাবি, আগাছা তোলার যন্ত্রের দাম দু’হাজার টাকা। চাষিরাএই যন্ত্র কিনতে রাজি হচ্ছেন না। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, যন্ত্র কেনার জন্য চাষিদের হাতে টাকা দিতে হবে দুই রাজ্যের সরকারকেই। এই যন্ত্র কিনে বিকল্প উপায়ে যাতে ফসলের গোড়া নষ্ট করা যায় সে ব্যবস্থা সরকারি উদ্যোগেই করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, দিল্লির দূষণের পিছনে অন্যতম বড় কারণ  চাষের খেতে শুকনো খড় পোড়ানো ধোঁয়া। লাগোয়া পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে ওই ধোঁয়া এসে জমছে দিল্লির আকাশে।  দিল্লি-সহ নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রামের আকাশ ভরে গেছে ওই দূষিত ধোঁয়াতে। এই ধোঁয়ার সঙ্গেই যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণ সংস্থাগুলির কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলে দূষণের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শীতের মুখে এই দূষণ আরও লাগামছাড়া হয়ে পড়ছে।