কলকাতা, ৩০ জুন – ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের প্যারোলের মেয়াদ বাড়ল। আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত তিনি প্যারোলে থাকতে পারবেন বলে শুক্রবার জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। গত মঙ্গলবার মৃত্যু হয় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের স্ত্রী বীণা ভদ্রর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র জেল হেফাজতে থাকায় বীণা দেবীর দেখাশুনার দায়িত্ব ছিল তাঁর মেয়ের হাতে। তবে স্ত্রীর শেষকৃত্যের জন্য সাময়িক ভাবে জেল থেকে বেরনোর অনুমতি পান শিক্ষা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কালীঘাটের কাকু। শর্তসাপেক্ষে সেই প্যারোলের মেয়াদ বাড়াল হাই কোর্ট।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র। সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। যদিও তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের স্ত্রীর পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য সেই প্যারোলের মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দিল আদালত।
শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে সুজয়ের জামিন মামলার শুনানি ছিল। নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার সুজয়ের জামিনের আবেদন আগের দিনই খারিজ করেছিল হাই কোর্ট। তবে প্যারোলের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাকি ছিল। শুক্রবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানিয়ে দেন, পরিস্থিতির বিচার করে সুজয়ের প্যারোলের মেয়াদ ১৬ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হল।
কিন্তু জেলের বাইরে থাকলেও তাঁকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। তিনটি শর্তে ‘কালীঘাটের কাকু’-র প্যারোলের মেয়াদ প্রায় ১৭ দিন বাড়িয়েছে আদালত। প্রথম শর্ত , ১৬ জুলাই পর্যন্ত সুজয়ের ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকবেন ইডির একজন অফিসার। দুই, পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য তাঁকে কোন মন্দিরে বা অন্য কোথাও যেতে হলেও, ১০ কিলোমিটারের বাইরে তিনি যেতে পারবেন না । তিন, ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোথাও যেতে হলে, তা কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা আগে ইডিকে জানিয়ে রাখতে হবে। সুজয়কে আবার ১৭ জুলাই প্রেসিডেন্সি জেলে ফিরতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছে, সুজয় ওই ক’দিন তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করা এলাকার মধ্যে কোথাও গেলে, তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিবারের কয়েক জন সদস্য থাকতে পারবেন।
তিনি কোন সময় কী করছেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য লিখিত আকারে রাখতে হবে। তাঁর বাড়ির আশপাশে কোনও ভিড় করা যাবে না।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়ের নাম প্রথম প্রকাশ্যে আসে তাপস মণ্ডলের বক্তব্যে। তাপস জানিয়েছিলেন, নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ তাঁকে ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা জানিয়েছিলেন। এর পরই সুজয়ের উপর নজর যায় তদন্তকারীদের। গত ৩০ মে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে সুজয় কৃষ্ণ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর স্ত্রী বাণী ভদ্রের দেখাশোনা করেছেন তাঁদের মেয়ে। দীর্ঘদিন যাবৎ নানা শারীরিক সমস্যায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন বাণীদেবী। গত ২৬ জুন রাতে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন সুজয়কৃষ্ণের স্ত্রী বাণী ভদ্র। স্ত্রীর মৃত্যুর পর শেষকৃত্যে যোগ দিতে চেয়ে আবেদন জানান সুজয় ভদ্র। তিনি জামিন চাইলেও তা মঞ্জুর হয়নি। পরে প্যারোলে জেল থেকে বেরোনোর অনুমতি পান।শর্তসাপেক্ষে সেই প্যারোলের মেয়াদ বাড়ানো হল।