দিল্লি, ১৩ ডিসেম্বর – গণপিটুনির ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তো বটেই, মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধের কারণে খুনের ঘটনায় ন্যূনতম শাস্তি সাত বছর থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করার সুপারিশ করেছে সরকার। এছাড়া সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায় আরও অনেক কিছু সংযুক্ত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ফৌজদারি কার্যবিধিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চলেছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। সেই সংক্রান্ত ৩টি বিল গত অগস্ট মাসেই পেশ করা হয়েছিল সংসদে। যদিও আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল সেগুলি। কমিটির তরফে বিলে কয়েকটি পরিবর্তন সুপারিশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার লোকসভায় ৩টি ফৌজদারি আইন বিলের সংশোধিত সংস্করণ পেশ করেছেন। তাতেই গণপিটুনি, বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধ, সন্ত্রাসবাদী হামলা সহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও কড়া শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের অপরাধের অধীনে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এখন ভারতের প্রতিরক্ষা বা অন্য কোনও সরকারি উদ্দেশ্যে বিদেশে সম্পত্তির ক্ষতি বা ধ্বংসকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় এনেছে। আগের সংস্করণে শুধুমাত্র ভারতের মধ্যে সরকারি বা বেসরকারি সম্পত্তিহানি, প্রকাশ্য স্থানে হামলার মধ্যে বিষয়গুলি সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়া কোনও ব্যক্তিকে আটকে রাখা বা অপহরণ করার ঘটনায় কেন্দ্র, রাজ্য বা বিদেশের সরকারকে কোনও পদক্ষেপ করতে বাধ্য করা বা না করার বিষয়টিও ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
এই বিলে প্রথমবারের মতো গণপিটুনি এবং বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধে হত্যার ঘটনাকে একটি পৃথক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতি, বর্ণ, সম্প্রদায় বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের মতো কারণের উপর ভিত্তি করে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একটি হত্যার ঘটনা ঘটলে তা এই বিশেষ বিভাগের আওতায় পড়বে। এছাড়া ছোটখাট চুরি ছিনতাই, মানহানি, এবং সরকারি আধিকারিককে তাঁর কর্তব্য পালন থেকে বিরত করার জন্য আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় প্রচলিত শাস্তির বদলে সমাজসেবা করানোর প্রস্তাব আনা হয়েছে। যদিও ঠিক কী ধরনের সমাজসেবা করানো হবে,তা স্পষ্ট করা হয়নি।
এতদিন ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় মহিলাদের প্রতি এই “নিষ্ঠুর আচরণ” সংজ্ঞায়িত ছিল না। নতুন বিলে সেই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এবং তাতে মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার ক্ষতির বিষয়গুলিও সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
সংশোধিত ৮৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এমন কোনও ইচ্ছাকৃত আচরণ, যা কোনও মহিলাকে আত্মহত্যা করতে বা গুরুতর আঘাত করতে বাধ্য করে, বা জীবন, অঙ্গ বা স্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক বা মানসিকভাবে বিপদ ঘটাতে পারে সেগুলি অপরাধের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন নিগৃহীতার পরিচয় প্রকাশ করার ঘটনায় অভিযুক্তের ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।