নজির বিহীন : শাহের বিবৃতি দাবি করায় অধীর-সহ ৩৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন ওম বিড়লা

দিল্লি, ১৮ ডিসেম্বর– নজিরবিহীন ঘটনা লোকসভায়৷ শতাব্দির সেরা উদাহরণও বলা যায়৷ এর আগে সংসদের ইতিহাসে এরকম ঘটনা ঘটেছিল কিনা বলা মুস্কিল৷ সংসদে হট্টগোল করার কারণে লোকসভা থেকে একসঙ্গে ৩৩ জন সাংসদকে শীতকালীন অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করে দিলেন স্পিকার ওম বিড়লা৷ এঁদের মধ্যে তিন সাংসদের বিরুদ্ধে আবার সংসদের স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ কারণ, তাঁরা স্পিকারের পোডিয়ামে উঠে পডে়ছিলেন বলে অভিযোগ৷
সোমবার লোকসভায় পেশ হল টেলিকম বিল৷ বিলটি পেশ করলেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণও৷ এদিন বিল পেশ হওয়ার আগে থেকেই অধিবেশন কক্ষ তুমুল হট্টগোলে সরগরম ছিল৷ বিল পেশের সময়ও সেই ছবি পাল্টায়নি৷ বিল নিয়ে আলোচনার সময় বারবার বিরোধী সাংসদরা উঠে চলে আসেন নিজের আসন থেকে৷
গত চারদিনের মতো এদিনও লোকসভায় রং বোমা কাণ্ডে সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় সাংসদদের৷ এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর বিবৃতি দাবি লোকসভায় স্লোগান তুলছিলেন তাঁরা৷ এদিন লোকসভায় কংগ্রেস নেতা দলনেতা অধীর চৌধুরীযার নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধী সাংসদরা৷ কংগ্রেস সাংসদদের মতই স্লোগান তুলছিলেন তৃণমূল, ডিএমকে সাংসদরাও৷ চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার অভিযোগে এরপরই বিরোধী সাংসদদের আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্পিকার ওম বিড়লা ৩৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করে দেন৷ এঁদের মধ্যে তৃণমূলের সাংসদ রয়েছেন ৯ জন৷ এ ব্যাপারে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল প্রস্তাব পেশ করেন৷ তাতে সায় দেন স্পিকার৷
এর আগে গত সপ্তাহে ১৪ জন বিরোধী সাংসদকে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করেছেন ওম বিড়লা৷ সব মিলিয়ে ৪৭ জন সাংসদকে এই অধিবেশনে সাসপেন্ড করা হল৷ যা হালফিলে বেনজির৷

সোমবার পেশ করা টেলিকম বিলের একাধিক ধারা নিয়েও আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, জাতীয় নিরাপত্তার অছিলায় যে কোনও সংস্থার টেলিযোগাযোগ পরিষেবার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার বা বন্ধ করার বল্গাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। তা ছাড়া, নতুন বিলের খসড়ায় ইন্টারনেট নির্ভর ফোন এবং মেসেজকেও ‘টেলিযোগাযোগের’ আওতায় আনা হয়েছে।

গত অগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন টেলিযোগাযোগ বিলের খসড়া পাশ হয়েছিল। সরকারের যুক্তি ছিল, ১৩৮ বছরের পুরনো ব্রিটিশ জমানার টেলিগ্রাফ আইন ইন্টারনেট নির্ভর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী নয়। জাতীয় নিরাপত্তার কারণে নেট-নির্ভর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, ভবিষ্যতে প্রস্তাবিত ওই আইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।


তবে এই ঘটনাকে পক্ষপাতিত্বমূলক বলেই দাবি করছেন বিরোধী শিবির৷ কারণ অতীতে বিজেপি যে কখনও সংসদে হট্টগোল করেনি তা নয়৷ স্পেকট্রাম দুর্নীতির অভিযোগে এক টানা সংসদের দুটি অধিবেশনে হট্টগোল চালিয়ে গিয়েছিল বিজেপি৷ সে সময়ে লোকসভার নেতা ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ৷ প্রণব-মনমোহনের শত অনুরোধেও সংসদে হট্টগোল থামাতে রাজি হননি সুষমারা৷ কিন্তু সে সময় এইভাবে কাউকে সাসপেন্ড করতে দেখা যায়নি৷ তাহলে এখন কেন প্রশ্ন বিরোধীদের৷
বিরোধীরা এ ঘটনাকে তাঁদের কন্ঠরোধের চেষ্টা হিসাবেই দেখাতে চাইছেন৷ এ ব্যাপারে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী এদিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছেন৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চ্যানেলে গিয়ে সাফাই দিচ্ছেন৷ অথচ সংসদে এসে কথা বলছেন না৷ কারণ, সংসদে পাল্টা প্রশ্ন ওঠার ভয় পাচ্ছেন ওঁরা৷ আর সেই কারণেই বিরোধীদের এখন কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন দিল্লিতে রয়েছেন৷ তাই তৃণমূলের সাংসদরা এদিন ছিলেন আরও আগ্রাসী৷ এ ঘটনার পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেশে স্বৈরাচারী শাসন চলছে৷ কাউকে কোনও কথা বলতে দেওয়া হবে না৷ শুধু রাজা কথা বলবেন, আর বাকিদের শুনতে হবে৷