দিল্লি, ১৮ মে – সিদ্ধারামাইয়াই হচ্ছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী। উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন ডি কে শিবকুমার। চার দিনের অনেক জল্পনা-কল্পনার পর বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন এআইসিসির সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল কংগ্রেস হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে বহাল থাকবেন শিবকুমার।’’ সেখানে উপস্থিত ছিলেন কর্ণাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা রণদীপ সুরযেওয়ালা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় কর্নাটকের নবনির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়কদের বৈঠক ডেকেছেন শিবকুমার। সেখানেই আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্দারামাইয়ার নাম ঘোষণা করা হতে পারে।সেখানে উপস্থিত ছিলেন কর্ণাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা রণদীপ সুরযেওয়ালা।
এদিকে শিবকুমার হবেন উপমুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি রাজ্যের সভাপতি পদেও বহাল থাকবেন। আগামী বছর লোকসভা ভোট। সে কথা মাথায় রেখেই শিবকুমারকে রাজ্যের সভাপতি পদে বহাল রাখা হচ্ছে। যদিও জয়পুরে দলের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি গৃহীত হয়েছিল।
বেনুগোপাল বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা শপথ নেবেন আগামী শনিবার। এই উপলক্ষে সমমনস্ক সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস নেতারা একথাও বুঝিয়ে দেন, ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা পরের কথা। আপাতত মুখ্যমন্ত্রী পদে ভাগাভাগির কোন প্রশ্ন নেই। বেনুগোপাল বলেন, ‘ক্ষমতা ভাগাভাগির অর্থ হলো রাজ্যের মানুষের সঙ্গে ক্ষমতার আদান–প্রদান।’
নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর শুরু হয় কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের কাজ। একাধিকবার বৈঠকে বসে কংগ্রেস নেতৃত্ব। শোনা যায়, মুখ্যমন্ত্রী কে হবে সেই নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই মতানৈক্য দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে সিদ্ধারামাইয়া ও শিবকুমারের মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটাতে বুধবারও দফায় দফায় বৈঠকে বসে কংগ্রেস নেতৃত্ব। আলাদা করে দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল গান্ধিও।
কেন মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ে চার দিন লাগল এমন প্রশ্ন সাংবাদিক সম্মেলনে বারবার ওঠে। বেনুগোপাল উত্তরে বলেন, ‘আমরা সব সময় চেয়েছি সবার সঙ্গে কথা বলে মতৈক্যে পৌঁছতে।’ তিনি বলেন, ‘সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমার দুজনেই মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগ্য। তাঁরা ছাড়াও নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য বা অধিকারী আরও রয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী একজনই হবেন। সে জন্য গণতান্ত্রিকভাবে সর্বসম্মত হতে কিছুটা সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।’
কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সিদ্ধারামাইয়া সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে, তা আমারও মত। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।’
শিবকুমার একটি টুইট করেন যেখানে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে একটি ছবির নিচে লেখা র য়েছে, ‘কর্ণাটকের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত। রাজ্যবাসীর কল্যাণ আমাদের অগ্রাধিকার। তা নিশ্চিত করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে ৬১ বছরের শিবকুমার গোঁ ধরে ছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, দলকে জেতানোর জন্য তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। এবং সেটা তিনি রক্ষাও করেছেন। তাছাড়া একই ব্যক্তি কেন বারবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন? তবে সেই সঙ্গে তিনি একথাও জানিয়েছিলেন, দলের সিদ্ধান্ত যা–ই হোক, তিনি বিদ্রোহ করবেন না। ব্ল্যাকমেল করবেন না। কাউকে পেছন থেকে ছুরিও মারবেন না।
সিদ্ধারামাইয়ার পক্ষে আবার অধিকাংশ বিধায়কের সমর্থন ছিল। কংগ্রেস সূত্রে খবর, ১৩৫ জন বিধায়কের মধ্যে ৮৫ জনই সিদ্ধারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে আগ্রহী।
কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, এই টানাপোড়েনের অবসান ঘটাতে শেষ পর্যন্ত আসরে অবতীর্ণ হন সোনিয়া গান্ধি। গত বুধবার রাতে সোনিয়ার সঙ্গে কথা বলার পর ‘রাজ্য ও দলের স্বার্থে’ শিবকুমার উপমুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি হন। দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হন শিবকুমার। তিহার কারাগারেও ছিলেন তিনি। সেই সময় সোনিয়া তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান। শিবকুমারও সোনিয়াকে কথা দিয়েছিলেন, কর্ণাটক জিতে তাঁকে উপহার দেবেন।