মহিলা-মুসলিম বিদ্বেষী নয় বোঝাতে নতুন কৌশল আরএসএসের 

মােহন ভাগবত (File Photo: Amlan Paliwal/IANS)

দিল্লি, ১৩ মার্চ– আরএসএসকে বরাবরই হিন্দু প্রীতির জন্য দুষে এসেছে বিরোধীরা। সেই দুর্নাম ঘোচাতে এবার কোমর বেঁধে নেমে পড়ল দল। বর্তমানে আরএসএসের রাষ্ট্রীয় সেবিকা সঙ্ঘের সদস্য এখন দশ লাখের বেশি মহিলা। তিরিশ শতাংশের বেশি মুসলিমের বাস এমন সব মহকুমায় তাদের রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চের শাখা আছে। কিন্তু এতো সত্ত্বেও আরএসএসের সাংগঠনিক কোনও পদে মহিলা ও মুসলিমরা নেই।

আর এই দুই দুর্বলতাকে দূর করতে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সংঘ। এই দুই অংশকে আরএসএসের সংগঠনে যুক্ত করার বিষয়ে কথা হবে হরিয়ানার পাণিপথের শমালখা গ্রামে শুরু হওয়া অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি মণ্ডলের সভায়। রবিবার শুরু হওয়া তিনদিনের সম্মলনে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের কৌশল এবং ২০২৫-এ আরএসএসের শতবর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। মহিলা ও মুসলিমদের আরএসএসের সংগঠনের অংশ করে নেওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পেতে চলেছে আসন্ন নির্বাচন এবং সংগঠনের শতবর্ষ উদযাপনকে সামনে রেখেই। সঙ্ঘের শীর্ষ নেতা মনমোহন বৈদ্য হরিয়ানার সম্মেলন শুরুর আগে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মহিলা এবং মুসলিমদের মধ্যে প্রভাব বাড়াতে চাইছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পছমন্দা বা গরিব মুসলিমদের কাছে টানতে দলকে কর্মসূচি নিতে বলেছেন। সেই মতো উত্তরপ্রদেশে গতমাসে পছমন্দা মুসলিমদের একাধিক সংগঠনকে নিয়ে সভা করেছে বিজেপি। ওই রাজ্যে জনসংখ্যার কুড়ি শতাংশ মুসলিম। তাদের নব্বই ভাগই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী।


মুসলিমদের প্রভাব বিস্তারে আরএসএসের রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ অনেক আগে থেকেই কাজ করে আসছে। কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে সংগঠনের প্রভাব তেমন নেই। সঙ্ঘের সংগঠনেও মুসলিমরা না থাকায় বিজেপি এবং সঙ্ঘের সংখ্যালঘুদের কাছে টানার চেষ্টা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও বিজেপিতে প্রয়াত শিকন্দর ভখতের মতো কোনও মুসলিম মুখ নেই। এই কারণেই সঙ্ঘ ও বিজেপি-র ‘মুসলিম বিরোধী’ বদনাম ঘুঁচছে না বলে মনে করছেন সংগঠনের নেতারা। হরিয়ানার সভায় হাজির থাকছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা-সহ দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই। কথা হবে বিজেপি ও সঙ্ঘের সমন্বয় নিয়ে।

বিজেপিতে মহিলারা দলীয় সংগঠন এবং মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেও আরএসএসের মূল অংশে তারা নেই। সময়ের দাবি মেনে সঙ্ঘের মূল কাঠামোয় সমাজের এই দুই অংশকে যুক্ত করার পক্ষপাতী সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবালে। ২০২৫-এ সঙ্ঘের শতবর্ষে তিনিই সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে ঠিক আছে। বয়সের কারণে ভাগবত শতবর্ষেই সঙ্ঘ প্রধানের পদ এবং সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন।

শতবর্ষকে সামনে রেখে আরএসএস দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কাজে সরাসরি যুক্ত হবে বলেও ঠিক হয়েছে। হরিয়ানার সভায় সেই বিষয়েও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে সঙ্ঘ। সামাজিক সংগঠন হিসাবে প্রভাব বিস্তারে স্বনিযুক্ত প্রকল্পে বেকারদের উৎসাহ দিতে সহায়কের ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন বলে সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে।