দিল্লি, ৩০ মে – দিল্লির প্রকাশ রাস্তায় এক কিশোরীকে কুপিয়ে খুন করার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে শিউরে উঠেছে দেশবাসী। লাগামহীনভাবে যন্ত্রের মতো এক যুবক কুপিয়ে চলেছেন এক কিশোরীকে, পাথর দিয়ে আঘাত করছেন , লাথি মারছেন এই দৃশ্য আত্মস্থ করাও কঠিন। কিন্তু তার থেকেও যেটা আশ্চর্যের তা হলো ওই এলাকার বাসিন্দা বা পথচারীদের নির্বিকার অনুভূতি। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ ঘুরে তাকাচ্ছেন, কেউ বা তাকিয়েও দেখছেন না। প্রতিবাদ করা বা ঠেকানোর চেষ্টা করা তো অনেক পরের কথা। দিল্লির রোহিণীর শাহবাদ ডেয়ারি এলাকার এই ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, যে বাড়ির সামনে এই ঘটনা ঘটে , সেই বাড়ির বারান্দায় নিজের মনে খেলতে ব্যস্ত ছিল এক শিশু । ঘরের ভিতরে টিভি চলছিল। অলকা নামে ওই বাড়ির মহিলা এক সংবাদমাধ্যমে জানান, হঠাৎই একটি মেয়ের চিৎকারে আওয়াজ শুনে উঁকি মেরে ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেন, আতঙ্কিত ওই মহিলা বারান্দা থেকে শিশুকে ঘরে ঢুকিয়েই দরজা বন্ধ করে দেন। কাছেই অন্য এক বাড়ির মহিলার দাবি, জোরে টিভি চলছিল। ফলে চিৎকার বা কান্নার আওয়াজ শুনতে পাননি। পরে তিনি জানতে পারেন কিশোরীকে খুন করার ঘটনা । ওই মহিলার প্রতিক্রিয়া , “কিশোরীকে খুন হতে দেখে পথচারীরাই বাধা দিলেন না, আমরা কেন দেব?”
রবিবার দিল্লির রাস্তায় প্রকাশ্যে কিশোরী প্রেমিকাকে কুপিয়ে এবং পাথরের চাঁই দিয়ে মাথা থেতলে খুন করেন প্রেমিক সাহিল। সোমবার উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলশহর থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খুনের কথা স্বীকার করেন সাহিল। এই নৃশংস ঘটনা ঘটানোর পরও অনুতপ্ত নন ওই যুবক ।
সাহিলকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, ২০২১ সাল থেকে কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানায় ওই কিশোরী। সাহিলের সন্দেহ হয়, পুরনো প্রেমিকের কাছে ফিরে গিয়েছে প্রেমিকা। কারণ কিশোরীর হাতে ‘প্রবীণ’ লেখা উল্কি ছিল। সাহিলের দাবি, তাঁকে হুমকি দিয়ে কিশোরী বলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশকে জানাবে। এমনকী নকল পিস্তল হাতে ভয়ও দেখায় ।
তদন্তকারীদের দাবি, কিশোরী সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাওয়াতেই রবিবার হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ে সাহিল। পরিকল্পনা করে কিশোরীকে খুন করার। রাস্তা আটকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিশোরীর শরীরে মোট ৩৪টি ক্ষতচিহ্ন ছিল। ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত কিশোরীর দেহ রাস্তার ধারে ২৫ মিনিট পড়ে ছিল। তার পর পুলিশ ডাকা হয়। খুনের পর গা-ঢাকা দিতে মোবাইল বন্ধ করে বাসে উঠে পড়েন সাহিল। চলে যান উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলশহরে। তবে ওই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই তাঁকে ধরতে পারে পুলিশ। বুন্দেলশহরে এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেন সাহিল। সেখান থেকে বাবাকে ফোন করার জন্য ফোন ব্যবহার করতেই ধরা পড়ে যান।