কলকাতা, ১৩ জুলাই– রক্তেমাখা বাংলার পঞ্চায়েত ভোট দেখেছে গোটা দেশ। কোথাও বোমা কোথাও গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। সঙ্গে নতুন সংযোজন ব্যালট বক্স লুঠ, বক্সে জমি ঢেলে দেওয়া, আবার কোথাও-কোথাও তো ভোট গণনার দিন ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলা, নিয়ে পালানো আবার খেয়ে ফেলার মত নক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে। ভোটার পরই একে ওপরের ওপর অভিযোগ-মামলা করতে দেখা গিয়েছে বিরোধী-শাসক দলের। সেইসব ঘটনাগুলিকে মান্যতা দিয়েই এবার বঙ্গের বেশ কয়েকটি বুথে নতুন করে ভোট করার নির্দেশ দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
পুনঃনির্বাচনের তালিকায় রয়েছে হাওড়া সাঁকরাইলের ১৫টি বুথ। এই বুথগুলিতে ভোটের দিন ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে বিরোধী পক্ষ। পরে ভোট গণনায় দেখা যায় ১৫টি বুথেই শাসক দল তৃণমূল জয়ী হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গুরে, উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার বেশকিছু বুথে ব্যালট ছিনতাই হয়েছিল। বিডিও-র রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই সব বুথে নতুন করে ভোটের নির্দেশ দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আরও কিছু বুথে নতুন করে ভোট হবে । এইগুলি ছাড়াও ফের নির্বাচনের তালিকায় রয়েছে আরও কয়েকটি বুথ। সেগুলির নাম কমিশন এভাবেই পরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বলে বলে খবর । তবে এই ভোটগুলি কবে কবে হবে তা এখনও অনিশ্চিত। এই সব বুথের নির্বাচনকে পঞ্চায়েত ভোটের উপনির্বাচন বলে বিবেচনা করা হবে।
নির্বাচন কমিশন অনুসারে শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের দিন মোটের উপর শান্ত ছিল হাওড়া। বড় কোনও অশান্তি বা রক্তপাতের ঘটনা দেখা যায়নি। অথচ বিরোধীদের অভিযোগ অনুসারে সাঁকরাইলের একাধিক ভোট কেন্দ্রে সকাল থেকে ব্যালট লুঠ হয়। সেগুলি হল, মানিকপুর দর্জিপাড়া প্রাথমিক স্কুলের সাতটি বুথ, রশ্মি মহল শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের একটি বুথ, সারেঙ্গা হাইস্কুল ও পল্লিশ্রী পাঠাগারের কয়েকটি বুথ।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সাঁকরাইলের এই ১৫টি বুথে যে ভোটগ্রহণ হবে তাকে পুনর্নিবাচন বলা হবে না। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী নতুন করে ভোট নেওয়া হবে এই ১৫টি বুথে।
এছাড়া সিঙ্গুরের একটি বুথে নতুন করে ভোট নেওয়া হবে। ১৩ নম্বর নেতাজি জয়ন্তী পাঠাগারে ওই বুথ ছিল। গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম বেরাবেরি। নতুন করে ভোট হবে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরাতেও। হাবরার পুমলিয়া স্কুলে দুটি বুথে ভোট হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম হল ভুরখুন্ডা। ওই ভুরখুন্ডারই এমাডালিয়া মাদ্রাসায় যে বুথ ছিল সেখানে ব্যালট লুঠের অভিযোগ উঠেছিল। নির্বাচন কমিশন ঠিক করেছে, এই বুথেও নতুন করে ভোট নেওয়া হবে। হাবরার গুমা গ্রাম পঞ্চায়েতের দোগাছিয়া নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের একটি বুথেও ভোট লুঠের অভিযোগ ছিল। সেখানেও নতুন করে ভোট হবে।
রাজনীতিক মহল অনুসারে, নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য কমিশনের এই অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ কলকাতা হাইকোর্টে বুথ ধরে ধরে বিরোধীদের যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তার ভিত্তিতে হাইকোর্ট শুধু কমিশনকে দায়ী করছে না, বিডিও ও ভোট কর্মীদের কাছেও কৈফিয়ত তলব করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সকাল বিধানসভা পৌঁছে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন এই পুনঃনির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ঠ্যালায় না পড়লে বেড়াল গাছে ওঠে না।” তাঁর কথায়, “আমরা আদালতে আবেদন জানিয়েছি। আইনজীবীরা সওয়াল করবেন। এর শেষ দেখে ছাড়তে চাই”।