দিল্লি, ২৯ মে– দিন পাঁচ হয়ে গেল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন আম আদমি পার্টির প্রধান। রবিবার পর্যন্ত খাড়গে ও রাহুলের অফিস থেকে জবাব পাননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। আর কেজরির সঙ্গে এই দেখা করার সময় না দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নয়া জল্পনা।কারণ মোদির অর্ডিন্যান্স-কেজরির সেই অর্ডিন্যান্স আটকে দেওয়া নিয়ে আপাতত সরগরম দিল্লি। দিল্লির রাজ্য সরকারের হাত থেকে অফিসারদের ট্রান্সফার-পোস্টিং-সহ অনেক ক্ষমতা অর্ডিন্যান্স জারি করে কেড়ে নিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। সেই অর্ডিন্যান্স সংসদে আটকে দিয়ে এখনও পর্যন্ত গোটা দশেক দলের সমর্থন আদায় করে নিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল । আর এরপর কংগ্রেসের এই দেরিতেই স্বাভাবিকভাবে নয়া গল্প দেখছে দিল্লি সরকার।
নিয়ম হল অর্ডিন্যান্স সংসদের দুই কক্ষে পাশ করাতে হবে ছয় মাসের মধ্যে। লোকসভায় বিজেপি সহজেই সেটি পাশ করিয়ে নিতে পারলেও সমস্যা হবে রাজ্যসভায়। কেজরিওয়াল চাইছেন বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হয়ে রাজ্যসভায় অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে ভোট দিক।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে অন্তত রাজ্যসভায় নরেন্দ্র মোদিকে জোট বেঁধে হারানো যাবে।
ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ার, নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, কেসি চন্দ্রশেখর রাও, এমকে স্ট্যালিনদের দল এবং সিপিএম ও সিপিআই আম আদমি পার্টির পাশে থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সাড়া শব্দ নেই কংগ্রেসের।
দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস হাইকমান্ডের একাংশ লোকসভা ভোটের মুখে বিরোধী ঐক্যের দৃষ্টান্ত হিসাবে এই ইস্যুতে আপের পাশে থাকার পক্ষপাতী। কিন্তু কেজরিওয়ালকে নিয়ে আপত্তি আছে হাইকমান্ডের মধ্যেও।
তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি দিল্লি ও পাঞ্জাব কংগ্রেসের। আপত্তি আছে হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটক এবং গুজরাত বিজেপিরও। কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, আম আদমি পার্টি বিজেপির থেকেও কংগ্রেস বিরোধিতায় বেশি আন্তরিক। এই রাজ্যগুলিতে বিধানসভা ভোটে আপের টার্গেট ছিল কংগ্রেস। বহু আসনে আপ বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্বল প্রার্থী দিয়েছিল। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খরচও করেছে কয়েক গুণ বেশি অর্থ। গুজরাতে আপ ও বিজেপি বোঝাপড়া করে লড়াই করে বলে অভিযোগ। দেড়-দু বছর আগে গুজরাতে পা রেখে গত নভেম্বরের বিধানসভা ভোটে আপের ১২ শতাংশ ভোট পাওয়ার পিছনে বিজেপির হাত ছিল। আপ ভাগ বসায় কংগ্রেসের ভোটেই।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতৃত্ব মহা বিপাকে পড়েছে। কেজরিওয়ালকে সমর্থন না দিলে বিজেপি বিরোধী মঞ্চে কংগ্রেস চাপের মুখে পড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বেশিরভাগ বড় আঞ্চলিক দল যখন এই ইস্যুতে আপের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, সোমবার খাড়্গে দিল্লি ও পাঞ্জাবের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাঁদের মতামত শুনবেন। যদিও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে খোদ গান্ধী পরিবার থেকেই আপত্তি আছে কেজরিওয়ালকে সমর্থন করা নিয়ে। রাহুল, প্রিয়াঙ্কা-সহ শীর্ষ নেতৃত্বের আপত্তির একটি কারণ, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া গান্ধীকে ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় কেজরিওয়ালের দল বিজেপির সুরেই কংগ্রেসের বিরোধিতা করে।
তাছাড়া, দিল্লির আপ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। যে মদকাণ্ডে দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া জেল খাটছেন সেই বিষয়টি প্রথম সামনে এনেছিল কংগ্রেস। আবার সদ্য কর্নাটকের ভোটে মানুষ বিজেপি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো রায় দিয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে আপের পাশে থাকা মানে দুর্নীতি বিরোধী অবস্থানকে লঘু করে দেওয়া। তাতে সুবিধা হবে বিজেপির।