মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণে মোদি সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান রাহুল গান্ধি
SNS
দিল্লি, ২২ সেপ্টেম্বর – মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। এই বিল বাস্তবায়িত করা নিয়ে মোদি সরকারের সদিচ্ছার বিষয়ে সন্দিহান রাহুল গান্ধি। শুক্রবার কংগ্রেস সাংসদ বলেন, মহিলা সংরক্ষণ বিল কার্যকর হতে পারে, কিন্তু কার্যকর করতে চায় না কেন্দ্র সরকার। এই বিল ব্যবহার করে অন্য সমস্যাগুলো থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ওবিসি প্রসঙ্গও। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতেই রাজ্যসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাশ হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল ।
দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ওয়ানাড়ের কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। তিনি এদিন বলেন, “মহিলা সংরক্ষণ বিল খুবই ভালো। কিন্তু তার দুটি ফুটনোট রয়েছে- জনগণনা ও আসন পুনর্বিন্যাস। এই দুটি কাজ শেষ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগবে। কিন্তু সংসদ বা বিধানসভাগুলোতে এখনই মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ করে দেওয়া যায়, সেটা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। কিন্তু এই সরকার সেটা করতে চায় না। কেউ জানে না কবে এই বিল কার্যকর হবে।” এই বিল কার্যকর হওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে দেরি করছে তার সমালোচনা করেছেন রাহুল গান্ধি। এই বিল পাশ হলেও সমস্যাটি বাস্তবায়নের বলে উল্লেখ করেন রাহুল গান্ধি। তিনি বলেন, “তারা বলেছে, ‘আমরা একটি বিল সংসদে রাখছি, তবে আমরা ১০ বছর পর এটি কার্যকর করব।’ এর প্রকৃত অর্থ কী ? ” মোদি সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ” ভারতের মহিলাদের বুদ্ধিমত্তাকে অপমান করবেন না। ”
দেশবাসীর নজর অন্যদিকে সরাতেই এই বিল এনেছে সরকার বলে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে তোপ দাগেন তিনি। রাহুলের অভিযোগ, ওবিসি জনগণনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে এই বিল পাশ করানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রতিদিন ওবিসি মানুষের কথা বলেন, কিন্তু তাঁদের জন্য তিনি কী করেছেন? রাহুল এদিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ওবিসি। বিজেপি ওবিসিদের ক্ষমতায়ণের উপর অতীতেও বড় বড় কথা বলেছেন । কিন্তু বাস্তব হল, ওবিসিদের আর্থ সামাজিক উন্নতি ও ক্ষমতায়ণের উদ্দেশে সরকার কিছু করেনি। রাহুলের বক্তব্য, ওবিসিদের আর্থ সামাজিক উন্নতি করতে গেলে আগে খুঁজে বের করতে হবে যে দেশে তাঁদের প্রকৃত জনসংখ্যা কত? প্রসঙ্গত, মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে এসসি, এসটি, ওবিসি সম্প্রদায়ের মহিলা জনপ্রতিনিধিদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছিলেন সাংসদ সোনিয়া গান্ধিও। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি দাবি করেন, ইউপিএ জমানায় যে জাতিভিত্তিক গণনা হয়, সেই গণনার তথ্য কেন্দ্রীয় সরকার সামনে আনুন।
লোকসভা ভোট ও পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসন্ন। তার আগে জাতি গণনার দাবি নিয়ে মোদী সরকারের উপর আরও চাপ তৈরি করতে নেমে পড়ল কংগ্রেস । তাৎপর্যপূর্ণ হল, উত্তরপ্রদেশ সহ হিন্দিবলয়ে ওবিসি ভোট ব্যাঙ্কে বিজেপি তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকসভা ভোট এবং রাজস্থান, মধ্যপ্রদে, ছত্তীসগড়ে বিধানসভা ভোটের আগে সেই ধারণা বদলে দিতে চাইছেন রাহুল। ওবিসিদের কাছে টানার করার চেষ্টা করছেন তিনি।
রাহুল গান্ধি এদিন বলেন, সরকার ওবিসিদের আদমশুমারির বিষয়ে অমনোযোগী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ওবিসিদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ৯০ জন সচিব রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৩ জন ওবিসি সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ সরকার চালানোয় ওবিসিদের অংশীদারিত্ব মাত্র ৫ শতাংশ। সরকারের মোট বাজেটের মাত্র আড়াই শতাংশ বাস্তবায়ণের অধিকার শুধু ওবিসিদের রয়েছে। সরকার কি সত্যিই মনে করে যে দেশে ওবিসিদের সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশ ?
শুক্রবার বিজেপির মহিলা নেত্রীদের বৈঠকে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, একমাত্র স্থির ও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারই এই ধরনের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করতে পারে, একথা আমজনতাকে বোঝাতে হবে।