তদন্ত হওয়ার আগেই শাস্তির বিধান ‘প্রহসনের বিচার’: মহুয়া মৈত্র  ‘ডাবল মার্জিন’-এ জেতার চ্যালেঞ্জ তৃণমূল সাংসদের  

কলকাতা, ১০ নভেম্বর – তদন্ত না হতেই শাস্তির বিধান। বৃহস্পতিবার ‘ঘুষের বদলে প্রশ্ন’ মামলায় সংসদীয় এথিক্স কমিটির সুপারিশ সামনে আসার পরে একে ‘প্রহসনের বিচার’ বলে উল্লেখ করলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র৷ শুক্রবার এথিক্স কমিটির কড়া সমালোচনা করেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কমিটিকে তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে বুধবার রাতে এথিক্স কমিটির গোপন খসড়া রিপোর্ট কীভাবে ফাঁস হল সেই প্রশ্ন তুলেও লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লেখেন মহুয়া । চিঠিতে মোট ৬ দফা অভিযোগ জানিয়েছেন মহুয়া৷ সংবাদ মাধ্যমের সামনে এথিক্স কমিটিকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি৷
টুইট করে মহুয়া লেখেন, ‘অনৈতিকভাবে আমায় এথিক্স কমিটি বহিষ্কার করছে। সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এই ঘটনা প্রথম আমার সঙ্গে ঘটল। প্রথমে আমায় বহিষ্কার  করুন,তারপর তদন্ত করে প্রমান খুঁজে বের করতে বলুন।’
৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, এথিক্স কমিটির বৈঠক হয়। কমিটির প্রধান সাংসদ  বিনোদ কুমার সোনকার ৪৭৯ পাতার রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে। ভোটাভুটিতে এথিক্স কমিটির ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জন সাংসদ বহিষ্কারের পক্ষে ভোট দেন।
 
এথিক্স কমিটির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, নিজের পাসওয়ার্ড নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অন্যকে দিয়েছিলেন মহুয়া৷ এতে লঙ্ঘিত হয়েছে জাতীয় সুরক্ষার মতো বিষয়৷ এবিষয়ে মহুয়ার মন্তব্য, ‘‘৬১ বার প্রশ্নের জন্য ৪৭ বার লগ ইন হতেই পারে। ৯ টি প্রশ্ন হয়েছে আদানি নিয়ে। বাকি ৫২ প্রশ্ন তো অন্য ইস্যু নিয়ে। বন্ধুর অফিসের টাইপিস্ট প্রশ্নগুলো তুলেছিল। আমি আমার বন্ধুর অফিসের টাইপিস্টকে দিয়ে এই কাজ করাই, কী ভাগ্নিকে দিয়ে করাই, সেটা আমার ব্যাপার। আমার কাছে ওটিপি আসে।’’

মহুয়ার দাবি জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নে তিনি কখনও আপস করেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে আজ এই জায়গায় এসেছি। আমি এরকমই থাকতে চাই। নিশ্চিত কোনও ভুল ত্রুটি থাকলে শুধরে নেব। তবে আমি এভাবেই থাকব। তবে জেনে রাখুন আমি জাতীয় সুরক্ষার সাথে আপস করিনি।’’

তবে সময়ের আগে এথিক্স কমিটির খসড়া রিপোর্ট কী ভাবে সংবাদ মাধ্যমের কাছে এল এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের একটা রুল আছে ২৭৫(২), এথিক্স কমিটিতে যা থাকে তা বাইরে বেরোয় না। এখানে দেখলাম তারা বাইরে বলে দিচ্ছে। যিনি এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান তিনি তার নিজের নাম ঠিক করে বলতে পারেন না। এথিক্স কমিটি হাস্যকর করে তুলেছে। প্রমাণ নেই, তদন্তের আগে সুপারিশ করে দিচ্ছে।’’

তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর জেরে রাজনীতির অন্দরে  জল্পনা ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মহুয়া টিকিট পাওয়া নিয়ে।  যদিও টিকিট পাওয়া তো বটেই,  ‘ডাবল মার্জিনে’ জেতার প্রশ্নে প্রবল আত্মবিশ্বাসী সাংসদ৷ আত্মবিশ্বাসী মহুয়া  বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি৷ আমি দাঁড়াব৷ আমি ডাবল মার্জিনে জিতব। প্রথম থেকেই বলে এসেছি, আমি ওদের চিতায় তুলবই। আজকে যা হল, এটা আমার কাছে সুবর্ণ সুযোগ। যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা এবার ভুল বুঝতে পারছেন৷’’


এথিক্স কমিটি সুপারিশ করলেও, সাংসদ পদ হারানো নিয়ে এখনই কিছু ভাবতে চান না তৃণমূল সাংসদ ৷ এক সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মহুয়া বলেন,  ‘‘এখন কী হবে ভেবে লাভ নেই। আমার বহিষ্কার এখনও হয়নি। ডিসেম্বর মাসে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হোক। তারপর দেখা যাবে। শীতকালীন অধিবেশনের আগে আমার মুখ বন্ধ করতে হবে। রাহুল, কেজরিওয়াল, অভিষেককে সমস্যায় ফেলতে হবে। সেজন্যই এই সব করছে। আর ঝাড়খণ্ডের একটা লোক আছে (নিশিকান্ত দুবে), যাঁর সাংসদ হবার যোগ্যতা নেই, সে সাংসদ হয়েছে। ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে বসে আছে। লোকপাল কিছু জানাচ্ছে না, কিন্তু সে বলে চলেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্ত করবে। আমার লড়াই, আমাকে নিয়ে লড়াই আসলে রাজনৈতিক লড়াই। কোনও প্রমাণ নেই। কোনও মেরিট নেই। আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।’’

 বৃহস্পতিবার মহুয়া ইস্যুতে প্রথমবার মুখ খোলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড৷ বলেছেন, মহুয়া মৈত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার৷ এদিন মহুয়াও জানান তাঁর পাশেই রয়েছে তাঁর দল৷ সাংসদ বলেন, ‘‘আমি দলের প্রতীকের বাইরে নই। আমি দলের সাথে আছি।  আমিও মেরুদণ্ড সোজা করে লড়াই চালাচ্ছি। আমার সাথে দলের সূক্ষ্ম বিভাজনে আছে এমনটা বিজেপি বলে বেড়ায়। আমি দলের সাথে, দল আমার সাথে আছে।’’