গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির, অসন্তোষ প্রকাশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের 

দিল্লি, ১৮ অক্টোবর – আকাশপথে হামলায় গাজার আল আহলি হাসপাতালে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাণ গেছে ৫০০ র বেশি মানুষের।  এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি শোকপ্রকাশ করেন।  সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী লেখেন , ‘গাজার আল আহলি হাসপাতালে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনা গুরুতর চিন্তার বিষয়। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের এর দায় নিতে হবে। ‘   অন্যদিকে হাসপাতালে হামলার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।   বাইডেন এবার তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, এই বিস্ফোরণে ঘটনাটি ঠিক কী হয়েছে তা নিয়ে তথ্য জোগাড় করতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আল আহলি আরব হাসাপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমি প্রচন্ড বিরক্ত ও কষ্ট পেয়েছি। যেভাবে প্রাণহানি হয়েছে তা খুবই দুঃখের।  এই খবর শোনার পরেই আমি জর্ডনের রাজা আবদুল্লাহ ২, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছি। ঠিক কী হয়েছে সেব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য আমি ন্য়াশানাল সিকিওরিটি টিমকে নির্দেশ দিয়েছি।’

মঙ্গলবার হামাস শাসিত গাজায় একটি হাসপাতালে আছড়ে পড়ে মিসাইল। ওই মিসাইলের আঘাতে প্রায় ৫০০ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলেই দাবি গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের । যদিও ইজরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার করতে রাজি নয়। তারা প্যালেস্টাইনকেই এজন্য দায়ী করছে। অন্যদিকে, প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট এই হামলাকে নির্মম হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেন এবং তিনদিন ধরে শোকপালনের ঘোষণা করেন।
প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের তরফে বিবৃতিতে বলা হয় , “যা হচ্ছে তা আসলে গণহত্যা। এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আর চুপ করে থাকা যাবে না।”

হাসপাতালে মৃতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামাসের অভিযোগ,  ওই হামলার পিছনে রয়েছে ইজরায়েলি সেনা। যদিও তেল আভিভ কাঠগড়ায় তুলছে প্যালেস্টাইনে এক জঙ্গি গোষ্ঠীকে। বুধবারই তেল আভিভে পৌঁছনোর কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। 

হামাস-ইজরায়েল ১০ দিনব্যাপী এই লড়াইয়ে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।  এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে এতজনের মর্মান্তিক মৃত্যু নতুন করে পরিস্থিতিকে জটিল করে  তুলল। এই মুহূর্তে তেল আভিভে রয়েছেন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখান থেকেই তিনি ঘোষণা করেছেন বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজরায়েলে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। খতিয়ে দেখবেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। হামাস হামলার বিরুদ্ধে যে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার আছে সেই বিষয়ে বৈঠক করবেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে।
.মনে করা হচ্ছে ২০০৮ সালের পরে এত বড় বিমান হানা আর করেনি ইজরায়েল। তবে ইজরায়েল এখনও পর্যন্ত ঘটনা নিশ্চিত করেনি। ইজরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার এডিএম ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, হাসপাতালে মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। বিস্তারিত পেলে তা আমরা জানিয়ে দেব। এটা আদৌ ইজরায়েলের বিমান হানা কিনা সেটাই জানা নেই। এর দায় কার তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। 
অন্যদিকে গাজাতে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। এক হামাস জঙ্গিরও মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আমেরিকার তরফ থেকে বার বারই বলা হচ্ছে গাজাতে যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা যায় অর্থাৎ সাধারণ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায় সেটা দেখা হোক। কিন্তু তার মধ্যেই এই বিমান হানার খবর। 
এদিকে ইজরায়েল ইতিমধ্য়েই দাবি করেছে এই হামলার পেছনে প্যালেস্তাইনের জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। তাদের রকেট মিস ফায়ার হয়ে যায়। আর সেটাই গিয়ে পড়ে হাসপাতালে।
এদিকে ইজরায়েলের দাবি, শত্রুর রকেট আমাদের দিকে তাক করা হয়েছিল। সেটাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালে গিয়ে পড়ে। ইসলামিক জেহাদ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে ইসলামিক জেহাদ গোষ্ঠী গোটা বিষয়টি মানতে চায়নি। তাদের দাবি, গাজাতে তাদের কোনও কার্যক্রম এই সময়ে নেই।
এদিকে বুধবার ইজরায়েলে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার আগে এই ঘটনার জেরে যুদ্ধ পরিস্থিতি একেবারে অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। তবে বাইডেন জানিয়েছেন, সিভিলিয়ানদের জীবন রক্ষার ব্যাপারে আমরা বার বার বলছি, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যে রোগী, মেডিক্যাল স্টাফ ও নির্দোষ সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।
ইজরায়েলের আক্রমণের জবাব দিতে হামাসের হাতে এখন  পণবন্দি মানুষ। গত ৭ অক্টোবর গাজা স্ট্রিপ থেকে ইজরায়েলের উপরে হামলা চালানো শুরু করেছিল প্যালেস্টাইনের হামাস বাহিনী। ইজরায়েলে প্রবেশের পরই একাধিক ইজরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকদের বন্দি বানিয়েছিল হামাস। এখনও তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। এদিকে, এই পণবন্দিদের জন্যই হামাসের উপরে পুরোদমে হামলা করতে পারছে না ইজরায়েল সেনা। এবার সেই বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি হল হামাস বাহিনী। তবে রাখা হয়েছে একটা শর্ত।

হামাসের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, বন্দি থাকা ইজরায়েলি ও বিদেশিদের মুক্তি দিতে রাজি । তবে তার জন্য একটা শর্ত রয়েছে। ইজরায়েলকে গাজায় গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে। হামাসের ঘাঁটিতে হামলা বন্ধ করলেই হামাস বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দেবে।