মস্কো, ২৪ আগস্ট– বিমান দুর্ঘনায় মৃত্যু রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের। বুধবার তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন রুশ কর্মকর্তারা। দুই মাস আগে তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ বিদ্রোহের চেষ্টা করেছিলেন। ফলে তাঁর মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা কীভাবে হলো, কারণই–বা কী—এসব প্রশ্ন সামনে চলে আসছে।
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা বলছে, মস্কোর উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ভাগনারের প্রধান প্রিগোশিনসহ সব আরোহী নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে নৃশংস উপায় অবলম্বন এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিলেন যুদ্ধবাজ প্রিগোশিন।
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরও প্রিগোশিন এত দিন কি করে বেঁচেছিলেন তা নিয়ে আশ্চর্য প্রকাশ করেছেন বহু রাজনীতিকবিদ। কারণ নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কাউকেই বাঁচতে দেননা পুতিন। ব্যক্তিগত এমব্রায়ের জেট উড়োজাহাজে সাতজন যাত্রী ও তিনজন ক্রু ছিলেন বলে রাশিয়ার জরুরি সেবা সংস্থাবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কো থেকে উড়োজাহাজটি সেন্ট পিটার্সবার্গ যাচ্ছিল। রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় তিভের অঞ্চলের কুজেনকিনো গ্রামের কাছে এটি বিধ্বস্ত হয়। হঠাৎ ফ্লাইট ট্র্যাকিং থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে উড়োজাহাজটি প্রায় ২৮ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিল।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের তথ্যমতে, দুর্ঘটনাস্থলে আট ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। উড়োজাহাজটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এটি মস্কো থেকে উড্ডয়নের পর আকাশে প্রায় আধা ঘণ্টা ছিল।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিধ্বস্ত বিমানে ভাগনারপ্রধান ছিলেন। মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের পর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে উড়োজাহাজটির ফ্লাইট ডেটা আদান–প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই কুজেনকিনো গ্রামের কাছে এটি বিধস্ত হয়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরআইএ নভোস্তির প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, উড়োজাহাজের একটি ডানা নেই। সিএনএন অবশ্য ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। তবে আরআইএ নভোস্তি দাবি করেছে, এটিই সেই এমব্রায়ের জেট। তিভের অঞ্চলে আকাশ থেকে পড়ার মুহূর্তে এই ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল।
তবে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। রুশ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে। দুর্ঘটনাস্থলে তল্লাশি অভিযান চলছে।
বিজ্ঞান ও মহাকাশ নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক মাইলস ও’ব্রিন উড়োজাহাজের নিচে পড়ার ভিডিও পর্যালোচনার পর সিএনএনকে বলেন, ‘এটি খুব দ্রুত ঘুরপাক খেয়ে আকাশ থেকে পড়ছিল। এ সময় দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হচ্ছিল। সুতরাং মনে হচ্ছে, এতে আগুন ধরে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, উড়োজাহাজের কিছু অংশ নেই।
মাইলস ও’ব্রিন বলেন, বড় ধরনের অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে এ ধরনের একটি উড়োজাহাজ এমন ভয়ংকর গতিতে নিচে পড়ার কথা নয়।
বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক বলছেন, উড়োজাহাজের ভেতরে বা বাইরে শুধু কোনো বিস্ফোরণ ঘটলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হতে পারে উড়োজাহাজের ভেতরে কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছে। অথবা এটি লক্ষ্য করে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার আঘাতে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্রিগোশিনের এই বিদ্রোহ ২৩ বছর ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকা ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছিল। এই অভ্যুত্থানই আবার পিগোশিনকে লক্ষ্য বানিয়ে দিল। কিছু বিশেষজ্ঞ আগেই অনুমান করেছিলেন, যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধবাজ প্রিগোশিনের মৃত্যু হতে পারে। আসলে তিনি এখন ‘অ্যা ডেড ম্যান ওয়াকিং’।
এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বলেছিলেন, এই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার সঙ্গে পুতিন জড়িত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আসলে কী ঘটেছিল, আমি তা জানি না। তবে আমি এই দুর্ঘটনায় মোটেই বিস্মিত নই।’
রাশিয়ায় এক সময় বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী ছিলেন পুতিনের ঘোর সমালোচক বিল ব্রাউডার। পুতিনের সমালোচনার কারণে তাঁকে সে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বলেন, ‘ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরও প্রিগোশিন এত দিন বেঁচেছিলেন, তাতেই আমি বিস্মিত হয়েছি। ভাগনার গ্রুপের অন্যান্য নেতা ও প্রিগোশিনের মিত্রদের এখন হয় দৌড়ের ওপর থাকতে হবে অথবা আত্মগোপনে যেতে হবে।’