সুভাষ পাল, ৭ ফেব্রুয়ারি: প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ভাবানীপ্রসাদ মজুমদার। মৃত্যুকালে বিখ্যাত এই ছড়াকারের বয়স হয়েছে ৭৪ বছর। তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে বর্তমান। তিনি মরণোত্তর দেহদান করে গিয়েছেন ভবানীপ্রসাদ।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই তিনি ডিমেনশিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট সহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তাঁর শারীরিক সমস্যার আরও অবনতি ঘটে। এজন্য গত সোমবার তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মঙ্গলবার গভীর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কালজয়ী এই সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সাহিত্য জগৎ। তাঁর ছড়া ও রচনা পড়ে বেড়ে ওঠা পাঠক ও ভক্তরাও শোকস্তব্ধ। শোকের ছায়া নেমেছে তাঁর জেলা হাওড়াতে।
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের জন্ম ১৯৫৩ সালের ৯ এপ্রিল। জন্মস্থান হাওড়ার জগাছা থানার দাশনগরের দক্ষিণ শানপুর গ্রামে। তিনি নিজের গ্রামেই শৈশব জীবন অতিবাহিত করেছেন। কর্মজীবনে তিনি শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল শানপুর কালীতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে প্রথমে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবেও নিযুক্ত হন। স্কুলে শিক্ষকতার সময় ছোটদের নিয়ে লেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বাড়ে। তিনি ছোটদের জন্য প্রায় ২০ হাজার কবিতা ও ছড়া লিখে গেছেন।
সাহিত্যিক ভবানীপ্রসাদ মজুমদার মূলত শিশু ও কিশোরদের জন্যই লিখতেন। ছড়া নিয়ে নিরন্তর নানান রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসতেন। মূলত তাঁর স্যাটায়ারধর্মী লেখায় উঠে আসত সমাজের ব্যঙ্গচিত্র। তাঁর লেখা ‘ছাগলের কাণ্ড’, ‘রঙ বদলের ব্যাপার স্যাপার’, ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’, ‘দূর্গা অসুর কিসকা কসুর’ ছড়া তারই উদাহরণ। এখানে দেবতাদের রূপক ব্যবহার করে মূলত সরকারি কর্মীদের ব্যঙ্গচিত্রই তিনি তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখা সোনালী ছড়া, মজার ছড়া, হাওড়া-ভরা হরেক ছড়া, ডাইনোছড়া, কলকাতা তোর খোল খাতা সহ বহু মজার মজার ছড়ায় বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর ‘ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না/জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা’ লেখাটি পাঠক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর অসামান্য কৃতিত্বের জন্য একাধিক সম্মানে তাঁকে ভূষিত করা হয়েছে। উপেন্দ্রকিশোর রায় পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার, সুকান্ত পুরস্কার, অমৃতকমল পুরস্কার-সহ একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যজিৎ রায়কে নিয়েও বহু মূল্যবান লেখা লিখেছেন। তিনি সাম্মানিক হিসাবে সন্দেশ পত্রিকার তরফে সুকুমার রায় পদক পান সত্যজিত রায়ের কাছ থেকে। এছাড়া অভিজ্ঞান স্মারক, ছড়া সাহিত্য পুরস্কার’-সহ একশোর বেশি পুরস্কার পেয়েছেন।