১০ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ স্কুল, ৫০ শতাংশ কর্মীর ওয়ার্ক ফ্রম হোম
দিল্লি, ৬ নভেম্বর– দিল্লিতে দূষণের মাত্রা ক্রমেই ‘অতি ভয়ানক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ কার্যত ‘গ্যাস চেম্বার’ হয়ে উঠেেউ রাজধানী শহর৷ নিঃশ্বাস নেওয়া দায়৷ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা বলছে, দূষণ মানুষের জীবনের গড় আয়ু ১২ বছর কমিয়ে দিতে পারে৷ তবে এই সমস্যা বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানী শহরেই বেডে় চলেছে, যা উদ্বেগজনক৷
অবস্থা এমনই করুণ যে ইতিমধ্যেই দিল্লি ও পার্শবর্তী এলাকাগুলির স্কুল-কলেজগুলিকে দেওয়া দু’দিনের ছুটি বাড়িয়ে দশদিনের করা হল দিল্লি সরকারে ঘোষণায়৷ সোমবার সকাল থেকেই ধোঁয়াশা ঘেরা রাজধানী৷ আরকে পুরম, পাটপারগঞ্জ, নিউ মোতিবাগের মতো এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ৷ এই চার জায়গাতেই এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স চারশোর উপরে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের দূষণ বিরোধী পরিমাপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দিল্লি এই মুহূর্তে স্টেজ ফোর বা বিপজ্জনক ক্যাটাগরিতে রয়েছে৷ এই পর্যায় বিচার হয় AQI দিয়ে৷ তা ৪৫০এর বেশি হলে ‘সেভার’ বা গুরুতর ধরা হয়৷ দিল্লিতে সোমবারও AQI ৪৬৬৷ গত পাঁচদিন ধরেই প্রায় একইরকম, কোনও উন্নতি নেই৷
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, কালী পুজোর পরদিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত দিল্লি এবং রাজধানী সংলগ্ন এলাকায় জোড় ও বিজোড় পদ্ধতিতে রাস্তায় গাডি় নামবে৷ অর্থাৎ একদিন শুধু জোড় সংখ্যার নম্বর প্লেটের গাডি় চলবে৷ পরদিন চলবে বিজোড় সংখ্যার গাডি়৷ এইভাবে পথে গাডি়র সংখ্যা কমিয়ে বায়ু দূষণে লাগাম দিতে চাইছে সরকার৷
এই পরিস্থিতিতে আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করেছে কেজরিওয়াল সরকার৷ বেসরকারি অফিসগুলিতে ৫০ শতাংশ কর্মীকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাডি় থেকে কাজে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ ধোঁয়াশার মাঝে দূষণ যাতে আরও না বাডে়, তার জন্য দিল্লিতে সমস্ত রকমের নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ করা হয়েছে৷ পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই জানিয়েছেন, পেট্রল-ডিজেল চালিত গাডি়ও রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ লাগু করা হচ্ছে৷ দিল্লি সরকার এবিষয়ে কেন্দ্রের সাহায্য নিচ্ছে৷ তবে এখানেও রাজনীতিকরণের অভিযোগ উঠছে৷ গোপাল রাই মন্তব্য করেছে, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানায় বিজেপি সরকার৷ তাদেরও সাহায্য চাইছি৷ সকলে মিলে একসঙ্গে দূষণ রোধে কাজ করতে হবে৷
দূষণ রুখতে কেন্দ্রের কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট কিছু পদক্ষেপের খসড়া তৈরি করেছে৷ তাকেই বলে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান৷ একিউআই ৪৫০ ছাড়ালে তখন দূষণের মাত্রা ‘অতি ভয়ানক’ বলে ধরা হয়৷ সে সময় জিএআরপির চতুর্থ পর্যায় মেনে পদক্ষেপ করা হয়৷ দিল্লিতে সেই মতো পদক্ষেপ করারই নির্দেশ দিল কেন্দ্র৷
দূষণ-বিরোধী জিআরপিএ মেনে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে যা যা পদক্ষেপ করা জরুরি, তা-ও করতে হবে দিল্লিতে৷ দূষণ রোধে আর কী কী পদক্ষেপ করা যায়, তা নিয়ে সোমবার বৈঠকে বসছে দিল্লির কেজরীওয়াল সরকার৷
দিল্লির এই অবস্থার মাঝেই আরেক আতঙ্ক ভূমিকম্প৷ সোমবার বিকেলে রাজধানী-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে কম্পন অনুভূত হয়েছে৷ বিকেল ৪টে ১৬ মিনিটে অনুভূত এই ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫.৬৷ এই নিয়ে তিন দিনে দ্বিতীয় বার কাঁপল রাজধানী৷
ন্যাশানাল সেন্টার ফর সিসমোলজি এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে, সোমবার বিকেলের ভূমিকম্পের উৎসস্থল নেপাল৷ মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে কম্পন হয়৷ রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ৫.৬৷
শনিবার রাতেও দিল্লিতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল৷ কম্পনের উৎসস্থল সে বারও ছিল নেপাল৷ দিল্লি ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে কম্পন অনুভূত হয়েছিল৷ নেপালে সেই ভূমিকম্পের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ মারা গিয়েছেন দেড়শোর বেশি মানুষ৷
উল্লেখ্য, রবিবারও দিল্লির বাতাসের গুণগত মান অত্যন্ত ভয়ানক পর্যায়ে ছিল৷ ধুলোর কুয়াশায় শহর ঢাকা ছিল৷ এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিয়েল-টাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৫০০-এর বেশি ছিল৷ রবিবার দুপুরে দিল্লির উজিরপুরে বায়ু মানের সূচক ছিল ৮৫৯৷
জানিয়ে রাখি, একটি অনলাইন এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম আইকিউএয়ার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ নভেম্বর একিউআই লেভেল মাত্র এক দিনে দ্বিগুণ হয়ে ২৫৬ থেকে ৪৮৩-এ পৌঁছে যায়৷ অক্টোবরের বেশিরভাগ সময়ে একিছআই লেভেল ১৫০ থেকে ২০০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে৷ ২৮ অক্টোবর থেকে বায়ুর গুণগত মান খারাপ হতে শুরু করে৷ দিল্লি-এনসিআর-এ যানবাহন ও শিল্প দূষণ ছাড়াও পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় খড় পোড়ানো দূষণের অন্যতম কারণ৷ নাসার ওয়ার্ল্ডভিউ স্যাটেলাইট খড় পোড়ানোর ঘটনাগুলি রেকর্ড করেছে৷ ২৬ অক্টোবর খড় পোড়ানোর ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল৷ পরের দিনও তা বাড়তে থাকে৷ ২৮ অক্টোবর অনেকটাই হ্রাস পায়৷ ২৯ অক্টোবর তা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, চলতি মরশুমে খড় পোড়ানোর ঘটনার বৃদ্ধি হলেও গত বছরের থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর-২৯ অক্টোবর পর্যন্ত খড় পোড়ানের ঘটনা ২৭ শতাংশ কমেছে৷
বায়ু দূষণে বিষয়ে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বিশেষজ্ঞদের মতে,অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রার দূষণ সব বয়সের এবং এমনকি ভ্রূণের উপরও মারাত্মক স্বাস্থ্যের প্রভাব ফেলে৷ স্বাস্থ্যের প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে, মানুষ যে বায়ু শ্বাস নিচ্ছে তার গুণমান ২৫-৩০টি সিগারেট ধূমপানের সমতুল্য৷