সারা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হবে , নির্দেশ দিল আদালত
SNS
কলকাতা, ১৫ জুন – সারা রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে, নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের।নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্যের ২২টি জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে, জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। শুধু স্পর্শকাতর এলাকা নয়, গোটা রাজ্যেই পঞ্চায়েত ভোটে নিয়োগ করা হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আগামী ৪৮ ঘটার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আবেদন করতে হবে কমিশনকে। রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের খরচ জোগাবে কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার সকালে হাইকোর্টে মামলার শুনানির শুরু থেকেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর আগে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল স্পর্শকাতর জেলাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার জন্য। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ছিল, তারা এখনও পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেনি। স্পর্শকাতর এলাকাও চিহ্নিত করা হয় নি। সে কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে কি গোটা রাজ্যকে স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেব? সেটা ভাল হবে?’
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে ওঠে রাজ্য, রক্তাক্ত হয় বিভিন্ন জেলা। মনোনয়নের শেষ দিনেও হিংসার ঘটনায় মৃত্যু হয় তিনজনের। মনোনয়নকে ঘিরে এই নজিরবিহীন হিংসার ঘটনাবলি দেখে এদিন শুনানি পর্বেই রাজ্য এবং নির্বাচন কমিশনকে তিরস্কার করে আদালত। রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে যে ধরণের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে চলেছে তাতে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এদিন তিরস্কারের সুরে বলেন, ‘‘স্পর্শকাতর বুথ নিয়ে যদি কমিশন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তবে আদালত গোটা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেবে।’’ আদালত আরও বলে, ‘‘পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে রায় কার্যকর না হলে আদালতও নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না ।’’
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরোধীদের করা জনস্বার্থ মামলায় হাই কোর্ট যে রায় ঘোষণা করেছিল, তা পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে যান রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয় বিরোধী দল বিজেপিও ।
ওই মামলার শুনানিতে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আদালতে বলেন, ‘‘ আদালত সাতটি স্পর্শকাতর জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু স্পর্শকাতর এলাকা এখনও চিহ্নিত হয়নি। তাই এই রায় পুনর্বিবেচনা করা হোক।’’ শুনানিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, “গত পরশু আইএসএফ ১৫ হাজার সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন পেশ করতে যান। মনোনয়ন কেন্দ্র ভাঙচুর করে। গোটা রাজ্যজুড়ে বিজেপি সহ বিরোধীরা অশান্তি তৈরি করছে।” প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নিজেদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখবেন। মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির খবর আসছে।” কিছুটা তিরস্কারের সুরে প্রধান বিচারপতি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলেন, “আমি সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেব?”
প্রধান বিচারপতি এদিন বলেন, ‘আমি কমিশনকে উপদেশ দেওয়ার জন্য বসে নেই যে, আপনারা উচ্চ আদালতে যান। আপনাদের হাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আপনারা যদি আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেন, তা হলে আমরা নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকব না। বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পুলিশ পদক্ষেপ করুক।’
আদালতকে রাজ্য জানায়, পুলিশের ব্যবস্থা করার জন্য সবরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, পঞ্জাব এবং তামিলনাড়ুর কাছে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যসচিবও আশ্বাস দিয়েছেন। বাইরের রাজ্য থেকে পুলিশ আসছে।
তারপর বিকেলেও দীর্ঘক্ষণ মামলার শুনানি হয়। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপর আর আস্থা রাখতে পারেনি আদালত। আদালত বলে, নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ফেলে রাখার জন্য নয়। আদালত জানায় , আগে আদালত যা যা নির্দেশ দিয়েছিল , তাকে মান্যতা দিয়ে কোনও রকম প্রশংসনীয় পদক্ষেপ করেনি রাজ্য কমিশন। শেষ পর্যন্ত সন্ধেয় মামলার রায় জানিয়ে দিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।