লকাতা, ১১ আগস্ট – যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুকে ঘিরেও রাজনৈতিক তরজায় কোন ছেদ পড়ল না। কার্যত গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই বড়সড় প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। স্বপ্নের দীপ নিভে গেছে, চুরমার হয়ে গেছে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের দীর্ঘদিনের লালিত ভবিষ্যৎ, কিন্তু এই মৃত্যুকে ঘিরে রাজনীতি থিম থাকেনি। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর জন্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অন্যদিকে সুকান্তকে পাল্টা জবাবে দিতে স্বপ্নদীপের মৃত্যুর জন্য রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দ বোসকে দায়ী করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
হস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে স্বপ্নদীপের। সেই ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তিনি নিজে একজন অধ্যাপক, শিক্ষা জগতেও তাঁর বিচরণ, ফলে একজন ছাত্রের মৃত্যুতে তিনি নিজেও মানসিক আঘাত পেয়েছেন।
সুকান্ত টুইটে লিখেছেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করে রাজ্য সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সুশাসন বজায় রাখতে ব্যর্থ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার র্যাগিংয়ের মতো অপরাধ রুখতে পারেননি। রাজ্য সরকারকে ধিক্কার জানাই।’’
সুকান্ত লেখেন, “প্রশাসনিক মদত ছাড়া টিএমসিপি, এসএফআই, ডিএসএফের মতো ছাত্র সংগঠনগুলো রাগিংয়ের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করতে পারে না। নিজের প্রাণ দিয়ে স্বপ্নদীপকে তার মূল্য দিতে হল।”
এর পাল্টা জবাবে ব্রাত্য লেখেন, ‘‘যে কোনও দুঃখজনক ঘটনায় বিজেপির কাজই হল রাজ্য সরকারের খুঁত খুঁজে বার করা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি আমাদের উপর দায় চাপানোর তাড়াহুড়োয় এটা ভুলেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি রাজ্যপালের নিয়ন্ত্রণে। ফলে এটা তাঁর ব্যর্থতা।’’ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দাবি, যে কোনও ঘটনাতেই রাজ্যের দোষ খুঁজে পাচ্ছে বিজেপি। গাছের পাতা নড়লেও বিজেপির দোষ। ‘
জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকাকালীন বিধানসভায় আচার্য বিল পাশ হয়। যেখানে রাজ্যপালের বদলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যপাল বদলে গেলেও সেই বিলে সই না হওয়ায় তা আইনে পরিণত হয়নি। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের কর্মসূচি থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে আচার্য বলে সই করুন।’’ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাজভবনের ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে মমতা ধনখড়ের সঙ্গে বর্তমান রাজ্যপালের তুলনাও টানেন। এবার স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুতে সেই রাজনৈতিক সংঘাত আবার নয়া মাত্রা পেল।
এই ঘটনার পর যাদবপুরে ছুটে যান রাজ্যপাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।অধ্যাপকদের পাশাপাশি মনোরোগ চিকিৎসক ও মনোবিদকেও ডেকে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকে দফায় দফায় খবর নেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। কেন অকালে চলে গেল তরুণ তরতাজা প্রাণ, নগ্ন অবস্থায় কেন পাওয়াগেল তারদেহ , খুন না আত্মহত্যা, নাকি রাগ্গিংয়ের জের এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।