রাজনৈতিক লড়াইয়ের জেরে মানুষের স্বাস্থ্য হত্যা হচ্ছে, দিল্লির দূষণ নিয়ে কড়া মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

দিল্লি, ৭ নভেম্বর – দিল্লি ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাতাসের দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে এমন জায়গায় পেঁঁৗছেছে যা মানুষের স্বাস্থ্্যকে খুন করছে৷ দিল্লির দূষণ নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই চলতে পারে না৷ দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ে মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট৷ পাশাপাশি ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ প্রতিবেশী রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের জন্য এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷  ভয়াবহ দূষণ নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে এদিন ভ্যৎর্‌সনা করেন বিচারপতিরা৷
গত কয়েকদিন ধরে দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পেঁৗছেছে৷ দূষণের কারণে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক স্কুলগুলিকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির কেজরীওয়াল সরকার৷

মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কৃষাণ কৌল ও সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে৷ সেখানে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো ও তার জেরে দূষণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই দুই বিচারপতি৷ তাঁদের কথায়, বছরের পর বছর দিল্লি এটা সহ্্য করবে এমনটা চলতে পারে না৷ পাশাপাশি পাঞ্জাব সরকারের অইনজীবীকে বেঞ্চ বলে, প্রতিবার এই নিয়ে রাজনীতি চলতে পারে না৷
প্রত্যেক শীতে প্রতিবেশী রাজ্য পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা, এই দুই রাজ্যকে শস্যের গোড়া পোড়ানো বন্ধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ পাঞ্জাব সরকারকে শীর্ষ আদালত বলেছে, “শস্যের গোড়া পোড়ানো এখনই বন্ধ হওয়া উচিত৷ কী ভাবে করবেন সেটা আপনাদের বিষয়৷ আপনাদের কাজ৷ তবে এই কাজ এখনই বন্ধ হওয়া উচিত৷”
দূষণ নিয়ে মামলাকারীর আইনজীবী অপরাজিতা সিংহ আদালতে জানান, পাঞ্জাবে এখনও শস্যের গোড়া পোড়ানো চলছে৷ দিল্লির বাতাসের গুণগত মানের চরম অবস্থার জন্য শস্যের গোড়া পোড়ানোই দায়ী৷ এরপরই তিনি বলেন, “প্রতিবেশী রাজ্যগুলি এই কাজ বন্ধ করার বিষয়টি মুখে বললেও কার্যক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না৷ এখনও শস্যের গোড়া পোড়ানো চলছে৷” এরপরই দিল্লির দূষণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত৷ সেই সঙ্গে জানিয়ে দেয়, দূষণ নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই করা ঠিক নয়৷ এখানে মানুষের স্বাস্থ্য জডি়য়ে৷ বাতাসের গুণগত মান যে ভাবে খারাপ হচ্ছে, তা মানুষের স্বাস্থ্যকে খুন করার সমান৷
একই সঙ্গে আদালত দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে পৌর এলাকায় কঠিন বর্জ্য যাতে উন্মুক্ত জায়গায় পোড়ানো না হয়৷ দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় গাড়ি থেকে হওয়া দূষণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত৷
দিল্লিতে গত কয়েকদিন ধরে দূষণ মারাত্মক আকার নিয়েছে৷ বাতাসের গুণগত মান গত এক সপ্তাহ ধরে চারশোর উপর, যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে গাডি়র জোড়-বিজোড় বিধির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে৷ স্কুল বন্ধ করা হয়েছে৷ নির্মাণকাজও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখন দিল্লিতে দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি৷ ইতিমধ্যেই দিল্লিতে দূষণের জেরে প্রচুর মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ শ্বাসকষ্টের সমস্যার পাশাপাশি চোখ-নাক জ্বালার মতো সমস্যা বাড়ছে৷ দিল্লির দূষণ ফুসফুসে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বাডি়য়ে দিয়েছে৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দিল্লির বাতাসের যা অবস্থা, এখানে শ্বাস নেওয়া ৪০-৫০টা সিগারেট খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর৷ ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ বেডে় গিয়েছে৷
আগামী শুক্রবার এ বিষয়ে শুনানি হবে৷ কী ভাবে শস্যের গোড়া পোড়ানো বন্ধ করা যায়, বিকল্প উপায় কী—এই সমস্ত বিষয়ে আশু সমাধানের জন্য উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং দিল্লি সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রকে আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷