আসানসোল,১৬ মে — সাধারণত আমরা জানি যে নরমাল ডেলিভারি মায়ের জন্য ভালো হলেও নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব বেদনা অসহনীয়। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে সিজার পদ্ধতি অবলম্বন করেন প্রসব বেদনা থেকে মুক্তির জন্য। কিন্তু এই প্রথম ‘পেনলেস নর্মাল ডেলিভারি’ করিয়ে নজির গড়ল আসানসোল জেলা হাসপাতাল । জেলা হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডক্টর বিনীতা কুমারী ও অ্যানাস্থেশিস্ট ডক্টর হৃষীকেশ মিত্রের নেতৃত্ব ও পর্যবেক্ষণে এই অসাধ্য সাধন করেছে বিশেষ টিম।
জানা গেছে, বার্নপুরের আলমনগরের বাসিন্দা নেহা খাতুন নামে এক প্রসূতি এই পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই হাসপাতালে। সন্তান জন্মের ২৪ ঘণ্টা পরে তাঁর শারীরিক অবস্থা একবারে স্বাভাবিক রয়েছে। ভাল আছে বাচ্চাও।
চিকিৎসা শাস্ত্রে অবশ্য এই পদ্ধতি একেবারে নতুন নয়। একে বলা হয়, ‘পেনলেস লেবার’। এই পদ্ধতিতে এপিড্যুরাল অ্যানাসেথেসিয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করে কৃত্রিম লেবার পেন তৈরি করা হয়। একে লেবার অ্যানালজেসিয়াও বলা হয়। এই পদ্ধতি কার্যকর করতে নির্দিষ্ট ঘনত্বের বিশেষ ওষুধ ইঞ্জেক্ট করা হয় মায়ের শরীরে। এতে তার শ্রোণি এলাকা অবশ হয়ে ব্যথার ভাব প্রায় না থাকলেও, বেবিকে পুশ করতে পারেন মা। অর্থাৎ তাঁর মাসেলগুলি সক্রিয় থাকে। এর ফলে সন্তানের জন্ম হয় স্বাভাবিক ভাবে যোনিপথেই, অথচ তাকে বার করার যে চরম প্রসব বেদনা, তা প্রায় সহ্যই করতে হয় না মাকে।
তাই এই পদ্ধতির ফলে নর্মাল পদ্ধতিতেই অথচ ব্যথাহীন ভাবে সন্তান প্রসব করা সম্ভব বলে জানালেন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এদিন তাঁরা বলেন, রবিবার সকালে নেহা খাতুন নামে এক প্রসূতি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পরেই তাঁর পেনলেস লেবার করানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। রবিবার সন্ধের পরে তিনি এই পদ্ধতিতেই, সম্পূর্ণ নিরাপদে তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দেন।এই প্রসূতির ক্ষেত্রেও তা সফল। উপরন্তু, সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে বা পরে কোনও ব্যথা অনুভব করেননি প্রসূতি মা।’
জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও এই পদ্ধতিতে ডেলিভারি করানোর চেষ্টা হয়েছিলো। কিন্তু তা সফল হয়নি। কিন্তু এবার আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তা করতে পারলেন। হাসপাতালের সুপার ডক্টর নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, ‘অবশ্যই এটা একটা ভাল দৃষ্টান্ত তৈরি হল। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভাল বার্তা যাবে।’ এইভাবে সন্তানের জন্ম দেওয়ায় নেহা খাতুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও খুব খুশি।