সংসদে রং বোমা হামলার মাস্টারমাইন্ড ললিত! ভাবতে নারাজ প্রতিবেশীরা  

কলকাতা, ১৪ ডিসেম্বর– স্বল্পভাষী হলেও ভীষণ ভদ্র, সদা হাঁসিমুখের ‘মাস্টারজি’ যে সংসদ হামলার  মুখ্য হোতা তা যেন কিছুতে মানতে নারাজ ললিত ঝা-র প্রতিবেশীরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় ললিত ‘মাস্টারজি’ নামেই পরিচিত ছিলেন।ব্যবহারে ভীষণ নম্র ললিত দেখা হলেই করজোড়ে নমস্কার করতেন আশেপাশের মানুষদের ।

জানা গিয়েছে, ২১৮, রবীন্দ্র সরণির চার তলাতে একচিলতে ভাঙাচোরা পুরনো একটি ঘরে ভাড়া থাকতেন ললিত।  সেই বাড়ির অন্য বাসিন্দা অনুজ আগরওয়াল জানালেন, আমরা অনেকে ওঁর আসল নামও জানতাম না। কারণ ওনাকে ‘‘মাস্টারজির হিসেবেই আমরা চিনি। কিন্তু এখন তাঁর নাম এ রকম এক ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় আমরা সকলেই অবাক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মাস্টারজির বয়স আমাদের মতোই ২৯-৩০ হবে। সদা ভদ্র-নম্র-শান্ত মানুষটির ঘরের মধ্যে কী হচ্ছে জানতাম না। ওঁর জন্য কোনও দিন সমস্যা হয়নি। চুপচাপ আসা-যাওয়া করতেন। এখানে যাঁরা ওঁর কাছে আসতেন, তাঁরাও বেশ চুপচাপই ছিলেন। ওকে দেখে কোনও দিন মনেও হয়নি যে এ রকম কিছুর সঙ্গে ওঁর যোগ থাকতে পারে।’’

ললিত সম্পর্কে একই অভিজ্ঞতা ওই একই বাড়ির আরেক আবাসিক লতা আগরওয়ালের। তিনি জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই ললিত ওই ভাড়াঘরে আসতেন। বেশি কথা না বললেও দেখা হলেই তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে থাকত। তবে কোভিডের পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি বলেও লতা জানিয়েছেন।


প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির মাইসুরু কেন্দ্রের সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র নিয়ে, জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি নামে দুই যুবক। অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ১টার কিছু পরে লোকসভায় জ়িরো আওয়ারে দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে ছুড়তে থাকেন সেই রংবোমা। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ। হুড়োহুড়ি বেঁধে যায় সংসদের অন্দরে উপস্থিত সাংসদদের মধ্যে।

পরে সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ অর্থাৎ ‘একনায়কতন্ত্র মানব না’ স্লোগান তোলেন অমল শিন্ডে এবং নীলম। তাঁদের হাতেও ছিল ‘স্মোক ক্র্যাকার’। তাদের চারজনকে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জানা যায়, ললিতই সেই রংবোমা-কাণ্ডের ‘মূলচক্রী’ । অভিযোগ, বুধবার লোকসভায় ওই ঘটনা ঘটানোর পর হোয়াট্‌সঅ্যাপে সেই ঘটনার ভিডিয়োও প্রথম পাঠিয়েছিলেন ললিত। পাঠিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গেরই এক বন্ধুর কাছে। ললিতের সেই বন্ধু নীলাক্ষ আইচকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নীলাক্ষ বিধাননগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তবে পড়াশোনার ফাঁকে সমাজসেবার কাজ করেন। তাঁর নিজের একটি এনজিও-ও আছে। পুলিশকে নীলাক্ষ জানিয়েছেন, এই এনজিও-র সূ্ত্রেই ললিতের সঙ্গে আলাপ তাঁর। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কয়েক জন পুলিশকর্মী উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরের জেটিয়ায় নীলাক্ষের বাড়িতে আসেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ললিতকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ!