দিল্লি, ৭ ডিসেম্বর – অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতেও অজানা চিনা নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এবার সম্ভবত সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানসেট’-এর রিপোর্টে এই দাবি করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই দিল্লি এইমসে চিনা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৭ জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে দিল্লিএইমস-এর তরফে জানানো হয়েছে, চিনা মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ার সঙ্গে আক্রান্ত সাত শিশুর কোনও সম্পর্ক নেই।তবে নিউমোনিয়া রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে ওই সাত শিশুর। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই শিশুদের শরীরে নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে।
বিশ্বজুড়ে এই রহস্যময় চিনা নিউমোনিয়া নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তার প্রভাব ভারতেও ছড়িয়ে পড়ছে কি না তা খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে তৈরি গ্লোবাল কনসর্টিয়ামের সদস্য দিল্লি এইমস। হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা জয়পুরের এনআইএমএস-এর বর্তমান ডিন ডা. রমা চৌধুরী বলেন, ‘এম নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া ঘটিত এই রোগ মৃদু প্রভাব ফেলে শরীরে। এটিকে ওয়াকিং নিউমোনিয়াও বলা হয়। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে। এই নিউমোনিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অবিলম্বে স্ক্যানিং শুরু করা প্রয়োজন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে, তার জন্য মনিটরিং প্রয়োজন।’
টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এইমসে মোট ৭ জন এম-নিউমনি ব্যাকটিরিয়া আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এই ব্যাকটিরিয়াটিই চিনে নিউমোনিয়ার প্রকোপের জন্য দায়ী। ‘ল্যানসেট’-এর রিপোর্ট, গত এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এই ৭ জন এম নিউমনি আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। এদের মধ্যে একজনের ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়েছে পিসিআর টেস্টে। বাকি ৬ জনের ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়েছে এলিজা টেস্টে। যদিও হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নিউমোনিয়ার সঙ্গে চিনা ব্যকটেরিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
বেশ কিছুদিন ধরেই চিনা শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে চলেছিল। শ্বাসকষ্ট, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিল অসংখ্য শিশু। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, করোনাভাইরাসের মতো কোনওভাবে এই নিউমোনিয়া ভারতেও প্রবেশ করতে পারে। এজন্য একাধিক সাবধানতা অবলম্বন করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু, তার মধ্যেই শিশুদের মিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এইমস-এর দাবি, ভারতের ৭ শিশুর শরীরে যে নিউমোনিয়ার হদিশ মিলেছে, তা চিনা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয়নি। কেন্দ্রের তরফেও একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, যে রিপোর্ট নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে, তা ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর।
উল্লেখ্য, চিনে করোনার মতোই মহামারীর আকার নিতে চলেছে অজানা নিউমোনিয়া। শীতের শুরুতেই বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ। চিনে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিতেই তাই বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিকাঠামো ঠিক করার কথা জন্য নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কেন্দ্রের ওই নির্দেশ পাওয়ার পরেই একাধিক রাজ্য সতর্কতা জারি করেছে।
সংবাদ সংস্থার খবর, শিশু, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা এবং দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যাঁরা খাচ্ছেন, তাদের জন্য এই রোগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই রোগ ভারতে ছড়াতে পারে আশঙ্কায় আগেই কেন্দ্র ছটি রাজ্যকে সতর্ক করেছে। এই রাজ্যগুলি হল রাজস্থান, কর্নাটক, গুজরাট, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা ও তামিলনাড়ু।