শুক্রবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাড়িতে বৈঠকে বসল দেশের বিরোধী শিবিরের সিংহভাগ নেতা-নেত্রী। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, অন্ধ্রপ্রদেশের জগনমোহন রেড্ডি এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী মায়াবতী বাদে দেশের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই পাটনার বৈঠকে যোগ দেন। বিদেশ সফরে থাকায় একমাত্র উত্তরপ্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোকদল নেতা জয়ন্ত চৌধুরী বৈঠকে থাকছেন না। বৈঠকের আহ্বায়ক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের অনুরোধ মেনে সব দলের নেতৃস্থানীয়রাই এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ।
দীর্ঘদিন বাদে একমঞ্চে এসেছেন রাহুল গান্ধি-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও উপস্থিত বৈঠকে। কিন্তু বৈঠকেও যেন মমতা-রাহুল দূরত্ব এড়ানো গেল না। দু’জনকে পাশাপাশি বসানো হল না। বরং মুখ্যমন্ত্রীর একপাশে বসলেন বিরোধী শিবিরের আরও দুই সিনিয়র নেতা লালুপ্রসাদ যাদব, এবং নীতীশ কুমার। অন্যদিকে বসলেন শরদ পওয়ার এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল । মমতার সারিতেই ছিলেন রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খাড়গেরা। কিন্তু রাহুল বসেছিলেন নীতীশ কুমারের পাশে। মমতা গুরুত্ব দিলেন আঞ্চলিক নেতাদেরই।
আসলে বিরোধীদের একজোট করার কাজটা শুরুতে করেছিলেন মমতাই। পরে সেই কাজটা খানিকটা এগিয়ে নিয়ে যান নীতীশ কুমার, শরদ পাওয়ারা। আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালও গোটা দেশে ঘুরেছেন। এদেরই পাশে নিয়ে বসলেন মমতা। আর বয়োজ্যেষ্ঠ লালুকে সম্মানের খাতিরেই পাশে রাখলেন তৃণমূল নেত্রী। সে তুলনায় খানিকটা দূরে ছিল কংগ্রেস। এদিনের বৈঠকে কংগ্রেসের দুই নেতা খাড়গে এবং রাহুলও দূরেই ছিলেন।বৈঠক বিবৃতিও দেন মমতা ব্যানার্জী, শরদ পাওয়ার।
বৈঠকে উপস্থিত যারা:
নীতীশ কুমার (জেডিইউ)
লালুপ্রসাদ যাদব (আরজেডি)
মল্লিকার্জুন খাড়গে (কংগ্রেস)
রাহুল গান্ধী (কংগ্রেস)
কে সি বেণুগপপাল (কংগ্রেস)
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল)
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল)
ফিরহাদ হাকিম (তৃণমূল)
অরবিন্দ কেজরিওয়াল (আপ)
ভগবন্ত মান (আপ)
ওমর আবদুল্লাহ (ন্যাশনাল কনফারেন্স)
মেহেবুবা মুফতি (পিডিপি)
শরদ পওয়ার (এনসিপি)
উদ্ধব ঠাকরে (শিব সেনা উদ্ধব গোষ্ঠী)
এমকে স্ট্যালিন (ডিএমকে)
অখিলেশ যাদব (সমাজবাদী পার্টি)
সীতারাম ইয়েচুরি (সিপিএম)
ডি রাজা (সিপিআই)
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য (সিপিআইএম লিবারেশন)
হেমন্ত সোরেন (ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা)
এছাড়াও বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত।
নরেন্দ্র মোদির বিগত নয় বছরের শাসনে এই প্রথম বিরোধী দলগুলি বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে এক টেবিলে বসল । এর আগে বিরোধী নেতারা বিভিন্ন সময়ে এক মঞ্চে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু গঠনমূলক আলোচনা হয়নি। বোঝাপড়া নিয়ে এমন বৈঠকের নজির নেই। যদিও নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় কাছাকাছি আসার কথা বলেছেন নানা সময়ে।
পাটনার বৈঠক বসার আগেই তাই নীতীশ কুমারের দল জনতা দল ইউনাইটেড বিরোধী মহা-সমাবেশকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বড় সাফল্য বলে তুলে ধরছে।
১৯৭৪ সালের জুন মাসেই পাটনার গান্ধি ময়দান থেকে জয়প্রকাশ নারায়ণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দিল্লির গদিচ্যুত করতে সম্পূর্ণ ক্রান্তি বা টোটাল রেভ্যুলুশনের ডাক দিয়েছিলেন। গান্ধী ময়দানের সেই সভার অন্যতম আয়োজক ছিলেন বিহারের আজকের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। শুক্রবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সিংহভাগ বিরোধী দলকে এক টেবিলে বসাতে চলেছেন সেই নীতীশ কুমারই।