ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্নে আপত্তি , ‘ব্যক্তিগত প্রশ্ন’ করার অভিযোগে মহুয়ার ওয়াক আউট 

দিল্লি, ২ নভেম্বর – তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বৃহস্পতিবার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, লোকসভার এথিক্স কমিটির বৈঠকে মহুয়াকে ‘ব্যক্তিগত এবং অনৈতিক’ প্রশ্ন করা হয়েছে, এই অভিযোগ করে বৃহস্পতিবার বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান মহুয়া মৈত্র-সহ বিরোধী সাংসদেরা। ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ কাণ্ডে মহুয়ার বক্তব্য শোনার জন্য তাঁকে বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠিয়েছিল এথিক্স কমিটি। কিন্তু মাঝপথেই সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন মহুয়া-সহ বিরোধী সাংসদেরা। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘‘এটা কী ধরনের বৈঠক? ওঁরা বাজে প্রশ্ন করছেন।’ বৃহস্পতিবার সকালে তিনটে ব্যাগ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে এথিক্স কমিটির সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র৷ বিকেল ৩টে বেজে ৫৫ মিনিট নাগাদ ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এলেন তিনি৷ একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘বাজে প্রশ্ন করছে’৷

‘ঘুষের বিনিময়ে’ সংসদের অধিবেশনে আদানি গ্রুপ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন মহুয়া মৈত্র৷ সম্প্রতি লোকসভার স্পিকার ওমপ্রকাশ বিড়লার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ জানান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে৷ এরপরই শুরু হয় বিতর্ক৷ ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছিল, ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে ঘুষ নিয়েই সংসদে আদানি গ্রুপ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন মহুয়া৷ 

এদিনের বৈঠকে মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ গিরিধারী যাদব৷ তাঁকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘ওঁরা মহুয়া মৈত্রকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিল৷ ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার অধিকার ওঁদের নেই৷’’ 


মহুয়া জানান, বৈঠকে তিনি গালে হাত রেখেছিলেন। সেই নিয়েও ‘বাজে’ কথা বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা সব কিছুতেই বাজে কথা বলছিলেন। ওঁরা বলেন, ‘আপনার চোখে জল’। আমার চোখে কি জল? আপনারা দেখতে পারছেন?’’ অন্য এক জন বিরোধী সাংসদ বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার পর বলেন, ‘‘এটা অতিরিক্ত ছিল।’’ মহুয়াকে যে ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিএসপির সাংসদ দানিশ আলি। সূত্রের খবর, মহুয়া রাতে কোন হোটেলে ছিলেন, কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ ধরনের ‘ব্যক্তিগত’ প্রশ্নও করা হয়েছে।

কংগ্রেস সাংসদ উত্তম কুমার রেড্ডি বলেন, ‘‘ প্রশ্ন শুনে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ওঁরা কারও কথা মেনে প্রশ্নগুলো করছে৷ এটা খুব, খুব খারাপ৷ গত দু’দিন ধরে আমরা জিজ্ঞেস করে চলেছি.. অথচ ওঁরা জিজ্ঞেস করে চলেছেন, আপনি কোথায় কোথায় যাচ্ছেন? কার সঙ্গে দেখা করছেন? আপনার ফোন কলের রেকর্ড দিতে পারেন?..কোনও রকমের টাকা লেনদেনের প্রমাণ ওঁদের কাছে নেই৷’’ মহুয়াকে যে ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিএসপির সাংসদ দানিশ আলি। সূত্রের খবর, মহুয়া রাতে কোন হোটেলে ছিলেন, কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ ধরনের ‘ব্যক্তিগত’ প্রশ্নও করা হয়েছে।

যদিও ভিডি শর্মা-সহ কয়েকজন বিজেপি সদস্যের অভিযোগ, অভিযোগের মূল অংশের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে , ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে কিছু বক্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে তুলে এনেছেন তৃণমূল সাংসদ।  

এথিক্স কমিটির একটি সূত্র মারফত খবর, প্রাথমিক ভাবে মহুয়াকে দু’টি প্রশ্ন করা হয়েছে। এক, তিনি ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে সংসদের লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন কি না। দুই, বিদেশ থেকে মোট ৪৭ বার ওই আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করা হয়েছে কি না। অন্য দিকে, মহুয়ার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, কৃষ্ণনগরের সাংসদ এথিক্স কমিটিকে জানিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্কের তিক্ততা’ থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে নিজের প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাইকে একহাত নিয়েছেন মহুয়া। সূত্রের খবর, সেই সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে মহুয়াকে। তবে বিজেপি সাংসদ ভিডি শর্মা মহুয়াকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরিবর্তে অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে বলেছেন। ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানিকে সংসদের লগইন আইডি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার কথা স্বীকার করেননি মহুয়া। জিজ্ঞাসাবাদ-পর্বের প্রায় আড়াই ঘণ্টা পার হওয়ার পর একবার বিরতি হয়। তারপর আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় বলে জানা যায়। তখনই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন মহুয়া-সহ বিরোধী সাংসদেরা।

মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যবসায়ী হিরানন্দানির থেকে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন তিনি। সেই প্রশ্নের নিশানায় ছিলেন শিল্পপতি গৌতম আদানি। অনেক সময়ই নিশানা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। গত ২৬ অক্টোবর এই কাণ্ডে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত এবং মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব দেহদ্রাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এথিক্স কমিটি। এর আগে মহুয়া লোকসভার এথিক্স কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানান, কমিটি গত দু’বছর ধরে কোনও বৈঠক ডাকেনি। পাশাপাশি, কমিটিকে তার লক্ষ্মণরেখাও মনে করিয়ে দেন তৃণমূল সাংসদ। কমিটি সূত্রে জানা যায়, তিনি লেখেন, এথিক্স কমিটি কোনও ফৌজদারি বিষয়ে তদন্ত করতে পারে না। তার জন্য আলাদা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রয়েছে। মহুয়ার আরও অভিযোগ, সংসদে কেন্দ্রীয় শাসকদলের যে গরিষ্ঠতা রয়েছে, তার অপব্যবহার করা হচ্ছে।কমিটির ক্ষেত্রেও সেই অভিযোগ তোলেন তৃণমূল সাংসদ।

মহুয়া এদিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে সব দায় চাপান  অনন্ত দেহদ্রাইয়ের উপর। সূত্র মারফত খবর, মহুয়া কমিটির কাছে জানিয়েছেন যে, অনন্ত দেহদ্রাইয়ের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন, সেইজন্যই ওই আইনজীবী শত্রুতার বশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ করেছেন।  মহুয়ার আরও অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংসদে বারবার সরব হওয়াতেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হচ্ছে।