• facebook
  • twitter
Friday, 18 October, 2024

সিবিআই তদন্তে আস্থা নেই , শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ মনিপুরের দুই নির্যাতিতা  

দিল্লি, ৩১ জুলাই – সিবিআই তদন্তে আস্থা নেই মনিপুরের দুই নির্যাতিতার। নির্যাতিতাদের আর্জি,  আদালতের পর্যবেক্ষণে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে ওই ঘটনার তদন্ত হোক। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের  প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি চলাকালীন কেন্দ্র জানায়, আদালতের পর্যবেক্ষণে তদন্ত হলে তাদের আপত্তির কিছু নেই। পাশাপাশি তদন্ত যাতে অসমে না যায়, সেই আর্জিও জানান নির্যাতিতারা। অন্যদিকে মণিপুর নিয়ে মামলা চলাকালীন

দিল্লি, ৩১ জুলাই – সিবিআই তদন্তে আস্থা নেই মনিপুরের দুই নির্যাতিতার। নির্যাতিতাদের আর্জি,  আদালতের পর্যবেক্ষণে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে ওই ঘটনার তদন্ত হোক। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের  প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি চলাকালীন কেন্দ্র জানায়, আদালতের পর্যবেক্ষণে তদন্ত হলে তাদের আপত্তির কিছু নেই। পাশাপাশি তদন্ত যাতে অসমে না যায়, সেই আর্জিও জানান নির্যাতিতারা। অন্যদিকে মণিপুর নিয়ে মামলা চলাকালীন এদিন উঠে আসে বাংলার প্রসঙ্গ। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মণিপুর নিয়ে এক মামলার শুনানিতে আইনজীবী বাঁশুরি স্বরাজ বলেন, মণিপুরের মতো বাংলার পরিস্থিতিও এক। কিন্তু সেখানে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে এক মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো, মারধর করা হয়েছে। আইনজীবীর সওয়াল শুনে তাঁর মন্তব্য খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করছি যেখানে জাতিবিদ্বেষের কারণে মহিলাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্যেও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মণিপুরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। মণিপুরের ঘটনাকে জাস্টিফাই করতে গিয়ে যদি অন্য রাজ্যের ঘটনা তুলে ধরা হয়, সেটা একেবারেই উচিত নয়।

সোমবার মণিপুর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, মণিপুরের যৌন নিগ্রহের ওই ঘটনাই একমাত্র উদাহরণ নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবের তরফে পেশ করা হলফনামার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ওই হলফনামাই বলছে, এই ধরনের বহু ঘটনা সে রাজ্যে ঘটেছে।” অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে তিনি জানতে চান, গত ৩ মে সে রাজ্যে হিংসা ছ়ড়িয়ে পড়ার পর নারী নির্যাতনের কতগুলি অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছে। নির্যাতিতাদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, “সরকারের কাছে এই নিয়ে কোনও তথ্য নেই। পাশাপাশি  তাঁরা যে সিবিআই তদন্ত চান না, তা-ও স্পষ্ট করে দেন সিব্বল। ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা স্পষ্ট যে অপরাধীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে পুলিশ। এর পরেও আমরা রাজ্য সরকারের উপরে কী ভাবে ভরসা রাখব?”

প্রসঙ্গত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার মাধ্যমে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করে জানিয়েছেন, মণিপুরে মহিলাদের নগ্ন করে ঘোরানো এবং গণ ধর্ষণের ঘটনার মামলাটির শুনানি রাজ্যের বাইরে করা হোক। কেন্দ্রের দাবি, রাজ্যের পরিস্থিতির কারণেই মামলা সরানো দরকার। আদালতে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার মতো পরিস্থিতি মণিপুরে নেই। কিন্তু মামলাকারীদের আশঙ্কা, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার অসম বা ত্রিপুরার মতো বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরাতে চাইছে।

প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আক্রান্ত মহিলাদের দ্রুত ন্যায় বিচার দেওয়ার নতুন কোনও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা যায় কি না সে ব্যাপারে আদালত ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও প্রস্তাব থাকলে তা আদালতে পেশ করতে বলে শীর্ষ আদালত।

কেন্দ্র ও মণিপুর সরকারের বিরুদ্ধে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের মণিপুরের দুই নির্যাতিতা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় যাঁদের প্রকাশ্যে নগ্ন করে হাঁটানো হয় , তাঁদের সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন, এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তাঁরা আবেদনে নিজেদের পরিচয় যাতে গোপন থাকে সেই আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের গোপন জবানবন্দি যেন তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি কোনও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নেওয়া হয় সেই আবেদনও জানান। সুপ্রিম কোর্টকে এই  বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ নেওয়ার আর্জি জানান তাঁরা ।একইসঙ্গে শীর্ষ আদালতের কাছে তাঁদের অনুরোধ, তাঁদের পরিচয় যেন গোপন রাখা হয়। সোমবারই এই মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে। 

বিভীষিকাময় এই ঘটনা ঘটেছিল ৪ মে, অর্থাৎ, মণিপুরে হিংসা শুরুর একদিন পরই। তবে, ১৯ জুলাই ঘটনার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়। ভিডিয়োটি ভাইরাল হতেই এই ন্যক্কারজনক ঘটনার কথা জানাজানি হয়। দেশজুড়ে শুরু নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।শীর্ষ আদালতের তিরস্কারের মুখে পরে কেন্দ্র ও রাজ্য। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শীর্ষ আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, রাজ্য ও কেন্দ্র অবিলম্বে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না করলে মনিপুরের ঘটনায় ব্যবস্থা নেবে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, “আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সরকারের পদক্ষেপ করার সময় এসেছে। এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। যদি সরকার কোনও পদক্ষেপ না করে, আমরা করব।”

এদিকে মণিপুর মামলার শুনানিতেও সোমবার উঠে আসে বাংলার নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মণিপুর নিয়ে এক মামলার শুনানিতে আইনজীবী বাঁশুরি স্বরাজ বলেন, মণিপুরের মতো বাংলার অবস্থাও এক। কিন্তু সেখানে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে এক মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। এরপরই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, নিঃসন্দেহে গোটা দেশে মহিলাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। এটাই  বাস্তব। তবে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, অন্য রাজ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মণিপুরের ঘটনাকে কোনওভাবেই ‘ন্যায্য’ বলা যায় না। সমগ্র ঘটনাই নিন্দাজনক।