দিল্লি, ৪ নভেম্বর– দেশ থেকে বিজেপি উৎখাতে গড়া হয় ‘ইন্ডিয়া’৷ কিন্তু দেশ থেকে বিজেপি হঠাৎ স্লোগানের আগেই নিজেদের মধ্যে ‘সিট বাচাও’ স্লোগানে উত্তাল ‘ইন্ডিয়া’৷ আসন সমঝোতায় ভাঙনের মুখে বিজেপি বিরোধী জোট৷
একদিকে, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব ঘোষণা করে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে রাজ্যে একাই ৬৫ আসনে লড়নে৷ জয়ন্ত চৌধুরীর রাষ্ট্রীয় লোকদল এবং কংগ্রেসকে সর্বোচ্চ ১৫টি আসন ছাড়বেন৷ ওই দুই দল তাতে সন্ত্তষ্ট না হলে রাজ্যের সব আসনেই সমাজবাদী পার্টি লড়াই করবে৷ অর্থাৎ বিজেপি বিরোধী জোটে থাকবেন না অখিলশের দল৷
অন্যদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজে মুখ না খুললেও তাঁর দল দিল্লি ও পাঞ্জাবে সব আসনে প্রার্থী দিতে প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে ফেলেছে৷ যদিও ইন্ডিয়া জোটের শরিক হিসাবে আপ-কংগ্রেসের আসন বোঝাপড়া হওয়ার কথা৷
একই পরিস্থিতি বাংলাতেও৷ তৃণমূল কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসকে আসন ছাড়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে আগ্রহ দেখায়নি৷ দলের এক নেতার কথায়, এই ব্যাপারে কংগ্রেসের থেকে কোনও আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি৷ তবে দুপক্ষই মনে করছে, আলোচনা সহজে এগবে না৷ ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূল, আপ এবং সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা নিয়ে বিবাদ কাটিয়ে বোঝাপড়া গডে় তোলার কাজটি কে করবেন৷ বৃহস্পতিবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের বক্তব্যের পর এই ব্যাপারে জল্পনা শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে৷
দু’দিন আগেই ইন্ডিয়া জোটের হোতা নীতীশ অভিযোগ করেছেন লোকসভা ভোট এবং ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব সিরিয়াস নন৷ তাঁদের যত মাথাব্যথা পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোট নিয়ে৷ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সব দল মিলে কংগ্রেসকে এগিয়ে দিয়েছিল জোট নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ করার জন্য৷ বাস্তবে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না৷
নীতীশ এই সব কথা বলেন পাটনায় সিপিআইয়ের জনসভায়৷ ওই কমিউনিস্ট পার্টিও মনে করে ইন্ডিয়া জোট নিয়ে যে উৎসাহ তৈরি হয়েছিল তা ইতিমধ্যেই মৃতপ্রায়৷ দুই কমিউনিস্ট পার্টি সিপিএম এবং সিপিআই আবার কংগ্রেসের উপর ক্ষুব্ধ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হাত শিবির তাদের প্রাপ্য আসন না ছাড়ায়৷
নীতীশের বক্তব্য নিয়ে কংগ্রেস দলগতভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেয়নি৷ দলের এক নেতার কথায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ভুল কিছু বলেননি৷ গোটা কংগ্রেস ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যে আটকে গিয়েছে৷ তৃণমূলের এক প্রবীণ সাংসদের কথায় রাহুল গান্ধি প্রচারে ব্যস্ত৷ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের উচিৎ ছিল জোট শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা৷
কেসি বেণুগোপালের মতো নেতারাও যোগাযোগ রক্ষার কাজটি চালিয়ে যেতে পারতেন৷ কিন্ত্ত মাস দেডে়ক ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কোনও তৎপরতা নেই৷ চলতি মাসে পাঁচ রাজ্যের ভোট নিয়ে কংগ্রেস নেতারা আরও ব্যস্ত থাকবেন৷ শেষ দফার ভোট হবে ২৫ নভেম্বর৷ জোটের বৈঠক না হওয়ায় কমিটগুলির তৎপরতাও থমকে আছে৷ আসন সমঝোতা নিয়ে একটি মাত্র বৈঠকের পর সব কিছু থমকে আছে৷
জেডিইউ-র এক নেতার কথায়, বিহারে ইন্ডিয়া জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হবে না লালু বা নীতীশের নিজেদের মধ্যেকার সব মিটিয়ে নেওয়ায়৷ কিন্তু অনেক রাজ্যেই কংগ্রেসকে নিয়ে বিবাদ হতে পারে৷ সেই রাজ্যগুলিতে নীতীশ কুমার আর সমঝোতার কাজে এগোবেন না৷ কারণ, পাটনার বৈঠকের পরই জোটের বৈঠক তাঁর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস৷ হাত শিবির মাথায় রাখেনি তাদের সঙ্গে বিবাদ হলে তৃতীয় কোনও নেতার মধ্যস্থতার প্রয়োজন হতে পারে৷
শারীরিক কারণে লালুপ্রসাদের পক্ষেও তা অসম্ভব৷ ফলে শরদ পাওয়ারের উপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই৷ কিন্ত্ত নানা সময়ে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্রের বাইরে পাওয়ারের তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই৷